পরিবেশ বাঁচাতে বিদ্যুতে স্বেচ্ছা ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব

বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, স্বেচ্ছা বিদ্যুৎ সংরক্ষণ কর্মসূচিতে কোন জেলায়, সপ্তাহের কোন দিন, কখন ব্যবহার বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হবে, তা ধাপে ধাপে জানানো হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০১:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

সপ্তাহে এক দিন আধ ঘণ্টার জন্য স্বেচ্ছায় বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ রাখুন রাজ্যবাসী— পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এমনই অনুরোধ জানাতে চলেছে নবান্ন।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ইচ্ছার কথা মঙ্গলবার বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান। তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করেন, ‘‘সরকার বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার অনুরোধ করবে মাত্র। কাউকে বাধ্যতামূলক ভাবে তা বন্ধ রাখতে হবে না।’’

বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, স্বেচ্ছা বিদ্যুৎ সংরক্ষণ কর্মসূচিতে কোন জেলায়, সপ্তাহের কোন দিন, কখন ব্যবহার বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হবে, তা ধাপে ধাপে জানানো হবে। সরকারি দফতরেও একই জিনিস অনুসরণ করা হবে বলে জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমিও অফিসে এক ঘণ্টা করে এসি বন্ধ রাখব। নিজে শুরু না-করলে, অন্যদের বলব কী করে?’’ উল্লেখ্য, গোপালকৃষ্ণ গাঁধী রাজ্যপাল থাকাকালীন সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা করে রাজভবনে স্বেচ্ছায় বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হত।

Advertisement

প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে আশির দশকে বাম জমানার লোডশেডিংয়ের স্মৃতিও জানিয়েছেন। তখন খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোন এলাকায়, কত ক্ষণ বিদ্যুৎ থাকবে না, তা জানিয়ে দেওয়া হত। সেখানে অনুরোধ বা স্বেচ্ছার অবকাশ ছিল না, সবটাই হত প্রশাসনের সিদ্ধান্তে।

কিন্তু রাজ্যে যখন বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত, তখন কেন এমন সিদ্ধান্ত? বিদ্যুৎমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, সপ্তাহে আধ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ হলে এক দিকে যেমন বিদ্যুৎ বাঁচবে, অন্য দিকে কয়লা, জল ও সর্বোপরি পরিবেশ বাঁচবে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি। অনেকের প্রশ্ন, যদি পরিবেশই একমাত্র বিষয় হয়, তা হলে বিকল্প বিদ্যুৎ নীতি নিয়ে সরকার কী করছে। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুকলের মতো বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর না-দিয়ে সরকার বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কেন? নবান্নের মতে, পরিবেশ রক্ষা সরকার পরিচালনায় অগ্রাধিকারে চলে আসছে। কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে জলের সঙ্কট দেখা দেবে। এ রাজ্যে জলস্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে এখনই সক্রিয় না-হলে রাজ্যের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিদ্যুৎ মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্যের নিজের হাতে থাকা পাঁচটি কয়লা খনির দু’টি মাত্র চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে টানা উৎপাদন জারি রাখতে যে পরিমাণ কয়লা কিনতে হচ্ছে, তা জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য। রাজ্যে এখনও ২২% বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী। চুরির কারণে বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সরবরাহ সংস্থাকে। ফলে রাজ্যের বহু জায়গায় লো-ভোল্টেজ এবং লোডশেডিংয়ের সমস্যা ফিরেছে। সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিদ্যুৎসচিবকে সে কথা বলেছেন।

এমন সময়ে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ রাখার অনুরোধ কি আসলে ঘুরপথে লোডশেডিং ঠেকানোর প্রক্রিয়া? বিদ্যুৎমন্ত্রী এই যুক্তি মানতে চাননি। তিনি জানান, উৎপাদন, সংবহন ও সরবরাহের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। রাজ্যে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আছে। পরিবেশের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন