কোনও প্রচার নেই। ভুক্তভোগীর তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকলেও সে-দিকে নজর নেই। বরং তথ্য যাতে কোনও ভাবেই প্রকাশিত না-হয়, তার উপরেই বাড়তি নজরদারি চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। এর জেরে রাজ্যে বছর তিনেক আগেকার সোয়াইন ফ্লু-র প্রকোপ ফিরবে বলে চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা।
গত বছর ডেঙ্গির মরসুমে স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে ‘তথ্য গোপন’ করার অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সেই অভিযোগ উঠছে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের একাধিক জেলায় সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মার্চের শেষ ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অন্তত ১০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু দফতর এর মোকাবিলায় মোটেই তৎপর নয়। বরং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনও ভাবেই যাতে এই রোগ ও রোগীর খবর প্রকাশিত না-হয়, সে-দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানান, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পরিবর্তে তথ্য গোপন করলে বিপদ বাড়াবে। ২০১৫ সালে রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু-র মারাত্মক প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রথম থেকে রোগ নিরাময়ে বাড়তি নজরদারি না-থাকলে ফের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সোয়াইন ফ্লু এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা। তাই বর্ষায় তার প্রকোপ বাড়ে। অথচ এ বছর গ্রীষ্মের শুরুতেই এই সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে বর্ষার সময়ে তার বাড়তি প্রকোপের ঝুঁকি থাকছে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, সর্দিকাশি, জ্বর, গলায় ব্যথা, গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি ফুলে ওঠার মতো উপসর্গ দেখা দিলেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিশেষ ভূমিকা থাকে বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য ভবনের জনস্বাস্থ্য-কর্তারা। প্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষায় সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়লেই আক্রান্তকে আলাদা ভাবে রাখা দরকার। কোনও এলাকায় একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হলেই এলাকার অন্য বাসিন্দাদের সতর্ক করা জরুরি। এই রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমেই ছড়ায়। তাই চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোগীকে আলাদা ভাবে রাখার প্রয়োজন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক না-করলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। রোগের দাপট বাড়লে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
উপসর্গ ও প্রতিকার
• সর্দি-কাশি • গলায় ব্যথা • শরীরের তাপমাত্রা বে়ড়ে যাওয়া
• বারবার বমি • পেটে ব্যথা • গ্ল্যান্ডে যন্ত্রণা
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
• রোগীকে আলাদা রেখে চিকিৎসা করা • এলাকায় একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হলে সতর্ক করা
• মাস্ক ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতায় বাড়তি নজরদারি • পোলট্রি, শূকর পালকদের সচেতন করার কর্মশালা
এই রোগ ঠেকাতে পশুপালকদের সচেতন করার জন্য বিশেষ কর্মসূচি দরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের খবর, তেমন কোনও সক্রিয়তা দেখানো হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ‘মাস্ক’ ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে পোলট্রি বা শূকর পালকদের সচেতন করতে লাগাতার প্রচার চালানো উচিত। কারণ, সোয়াইন ফ্লু-র জীবাণু পশুর দেহ থেকেই মানুষের দেহে ছ়ড়ায়। তাই এই রোগ সম্পর্কে পশুপালকদের মধ্যে প্রচার কর্মসূচি না-চালালে, রোগের প্রকোপের কথা তাঁদের না-জানালে বিপদ বা়ড়বে।
তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বেশি কথা বললে মানুষের মধ্যে অকারণে দুশ্চিন্তা তৈরি হবে। আতঙ্ক ছড়ানো স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই বাড়তি পরিকল্পনার দরকার নেই।’’ তবে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য
জুড়ে নজরদারি চলছে। সর্বস্তরে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’’