শাসক দলের স্লোগান ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’। শুধু স্লোগানই নয়, দলীয় প্রার্থী তথা মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বিষয়টিকে। তাঁর দাবি, ‘‘আমি জনগনের আশীর্বাদ নিয়ে বিজয়ী হতে চাই। ভোটের দিন কোনও রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেব না। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের অফিসারদেরও তা জানিয়ে দিয়েছি। বিরোধীদের কাছেও অনুরোধ, যদি ভোটের দিন কোথাও শাসক দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পার অভিযোগ ওঠে, তা হলে আপনারা আমাকে ফোন করবেন। আমি গিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’
মহেশতলা পুরসভার ২৬টি ওয়ার্ড নিয়েই মহেশতলা বিধানসভা এলাকা দুলালবাবুর খাস তালুক। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্রকে ‘হত্যা’ করে শাসক দল জয়ী হয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ রাজ্যর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই পটভুমিকায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ‘নিশ্চিত’ করার জন্য দুলালবাবুর বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।
বিধায়ক স্ত্রী কস্তুরী দাসের মৃত্যুতে মহেশতলা বিধানসভার উপনির্বাচনে দুলালবাবুকেই প্রার্থী করেছে শাসক দল। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রায় ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন কস্তুরীদেবী। প্রায় ৩৮% সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে এই বিধানসভা এলাকায়। ওই ভোট ব্যাঙ্কের ৯০ শতাংশই শাসক দলের ঝুলিতে আসবে বলে এক প্রকার নিশ্চিত দুলালবাবুর ভোট ম্যানেজাররা।
গত বিধানসভা ভোটে এখানে বিজেপির ভোট ছিল মাত্র ৭%। এ বার রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিই মুল বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছে। তবে তৃণমূল হিসেব কষে বলছে, মহেশতলা পুরসভার ২৬ ওয়ার্ডের মধ্যে তাদের দখলে রয়েছে ১৮টি ওয়ার্ড। পুরসভা ও বিধানসভায় নানা উন্নয়নেও মানুষ উপকৃত।
তাই দলীয় প্রার্থীর জয় নিয়ে তাদের চিন্তা নেই।
লড়াই তা হলে হচ্ছে কোথায়?
মহেশতলার এক বাম নেতার কথায়, নির্বাচনের লড়াই এখানে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে। মহেশতলায় শাসকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যই আসলে লড়াই হবে— বিজেপি না বাম। সিপিএম প্রার্থী প্রভাত চৌধুরী এগিয়ে রয়েছেন বলে দাবি করে দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীর ব্যাখ্যা, ‘‘মহেশতলার বাসিন্দা প্রভাত এলাকার কাছের মানুষ। প্রভাতের আশপাশে দামি গাড়ি নেই। বাস-অটোতেই তাঁর যাতায়াত। দীর্ঘ দিন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মহেশতলা এলাকার উপকারী চরিত্র হিসেবে পরিচিত মুখ। সেক্ষেত্রে বিজেপির বহিরাগত প্রার্থীকে নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ প্রভাতের পাশেই থাকবে বলেই আমি আশাবাদী।’’
সল্টলেকের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই কর্তা সুজিত ঘোষ বিজেপির প্রার্থী। মহেশতলায় নির্বাচনী প্রচার করছেন তিনি। মিছিল মিটিং পথসভা। সুজিতবাবুর কথায়, ‘‘শুনছি, শাসক দল অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার আবেদন করেছে। দেখা যাক, মানুষের আশীর্বাদ কোন দিকে যায়। আশা করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ সঠিক ব্যক্তিকেই বেছে নেবেন।’’