West Bengal News

কানামাছি খেলার নামে প্রেমিকের চোখ বেঁধে গলায় কোপ!

পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেমের পর মঙ্গলবার সকালে ছিল বিয়ের কথা। বিয়ের আগের রাতে টেলিফোন করে বাড়ির কাছে একটি মাঠে প্রেমিকা ডেকে নিয়েছিল তার আদরের প্রেমিককে। নানা কথার ফাঁকে প্রেমিকার আব্দার ছিল, এস না, আমরা কানামাছি খেলি! শীতের রাতে প্রেমিকার মুখে এমন আব্দার শুনে চমকে গেলেও না করেননি প্রেমিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ২০:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেমের পর মঙ্গলবার সকালে ছিল বিয়ের কথা। বিয়ের আগের রাতে টেলিফোন করে বাড়ির কাছে একটি মাঠে প্রেমিকা ডেকে নিয়েছিল তার আদরের প্রেমিককে। নানা কথার ফাঁকে প্রেমিকার আব্দার ছিল, এস না, আমরা কানামাছি খেলি! শীতের রাতে প্রেমিকার মুখে এমন আব্দার শুনে চমকে গেলেও না করেননি প্রেমিক। এর পর প্রেমিকের চোখে রুমাল বেঁধে দেয় প্রেমিকা। চোখ বাঁধা অবস্থায় প্রেমিকাকে ছোঁয়ার আগেই প্রেমিকের গলায় ধারাল কাস্তের কোপ!

Advertisement

রক্তে ভেসে যাওয়া শরীর নিয়ে কোনও রকমে প্রেমিক নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে আসেন থানায়। গুরতর আহত অবস্থায় সোমবার রাতে কালনার শাসপুর দীঘিরপাড় এলাকার বছর আঠাশের যুবক চিরঞ্জিৎ পালকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর কাছে ঘটনার বিবরণ শুনে রাতেই ওই যুবকের প্রেমিকা দীপা পণ্ডিত এবং তার বান্ধবী নাসিমা খাতুনকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে কাস্তেটি। পুলিশ জানিয়েছে, দীপার বাড়ি শহরঘেঁষা নিউ মধুবন এলাকায়। যদিও দীপা এই খুনের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে।

সোমবার রাত তখন ১১টা। কালনা থানায় লোকজনের তেমন ভিড় ছিল না। আচমকা একটি মোটরসাইকেল ঢুকে পড়ে থানার ভিতর। মোটরসাইকেল থেকে নামেন এক যুবক। তখন তাঁর সোয়েটার, জামা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। গলায় ধারাল অস্ত্রের আঘাত দেখিয়ে কোনও রকমে ওই যুবক জানান, তাঁকে কিছু ক্ষণ আগেই খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত তাঁর প্রেমিকা এবং তার এক বান্ধবী। গুরুতর আহত যুবককে এই অবস্থায় দেখে দেরি না করে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতেই কালনা থানার ওসি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে দ্রুত একটি বাহিনী নিউ মধুবন এলাকায় পৌঁছয়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় আহত যুবকের প্রেমিকা এবং তার বান্ধবীকে। মঙ্গলবার মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কুড়ির দীপার এলাকাতেই মুদিখানার দোকান ছিল চিরঞ্জিতের। সেখান থেকে প্রথমে আলাপ। পরে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা। নিউ মধুবন এলাকা থেকে চিরঞ্জিৎ দোকান তুলে দিলেও দু’জনের প্রেমে অবশ্য চিড় ধরেনি। সম্প্রতি তাঁরা বিয়ে করবেন বলে মনস্থ করেন। চিরঞ্জিতের পরিবার প্রথমে বিয়েতে আপত্তি করলেও বাড়ির ছোট ছেলের আব্দারে শেষ পর্যন্ত না করেনি। ঠিক হয়, মঙ্গলবার দুপুরে কালনা শহরের একটি মন্দিরে বিয়ে সেরে বউকে নিয়ে নিজের ঘরে উঠবে চিরঞ্জিৎ।

আরও পড়ুন: স্ত্রীকে ছুরি মেরে রক্তাক্ত দেহের পাশে তিন ঘণ্টা বসে রইলেন চিকিৎসক!

এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ শল্য বিভাগের একটি শয্যায় রয়েছেন তিনি। মাথার সামনে পড়ে তাঁর রক্তমাখা জামা-প্যান্ট এবং সোয়েটার। অস্ফুটে তিনি জানান, সোমবার রাত তখন সাড়ে ৯টা হবে। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আড্ডা চলছিল তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সাহাপুর কালীতলায়। আচমকা ফোন করে প্রেমিকা জানায়, তার জন্য কিছু খাবার নিয়ে যেতে হবে। দ্রুত কিছুটা ছানা কিনে তার বাড়ির সমানে মোটরসাইকেল নিয়ে পৌঁছে যান চিরঞ্জিৎ। দেখা যায়, বাড়ির কাছে একটি মাঠে সে অপেক্ষা করছে।

চিরঞ্জিতের দাবি, ‘‘সেখানে কিছু ক্ষণ গল্প করার পরে দীপা আব্দার করে কানামাছি খেলার। শীতের রাতে ওর আব্দারে কিছুটা অবাক হলেও সায় দিই। ও নিজের রুমাল দিয়েই আমার চোখ বেঁধে দেয়। রুমাল বাঁধা অবস্থায় ওকে খোঁজার চেষ্টা করলে আচমকা ধারাল অস্ত্রের কোপ পড়ে শ্বাসনালির কাছে। কোনও রকমে রুমাল খুলে ধারাল অস্ত্রটি কিছুটা দূরে ফেলে থানায় চলে আসি।’’ তাঁর দাবি, তাঁর গলায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুনের চেষ্টা করে প্রেমিকের বান্ধবী। কেন তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল? চিরঞ্জিতের বক্তব্য, ওই বান্ধবী ভাল স্বভাবের ছিল না। তাঁর প্রেমিকাকে খারাপ পথে নামানোর চেষ্টা করছিল। তা জানতে পেরে প্রেমিকাকে বার বার সতর্ক করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়: ‘‘দীপাকে মঙ্গলবার বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে গেলে ও আর দীপাকে খারাপ কাজে নামাতে পারত না। সে জন্যই দীপাকে প্রভাবিত করে আমাকে খুনের চেষ্টা করে।’’

এ দিন চিরঞ্জিতের মা সাবিত্রী পালকে দেখা যায় তাঁর শয্যার পাশেই কান্নাকাটি করতে। বৃদ্ধা মায়ের কথায়: ‘‘মেয়ে পছন্দ না হলেও ছেলের কথা ভেবে বিয়েতে মত দিই। আজ বৌমার বাড়ি আসার কথা ছিল। বাড়িতে সে নিয়ে যাবতীয় কাজও সেরে ফেলা হয়েছিল। ওই মেয়ে যে আমার ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করবে তা কোনও দিন ভাবতে পারিনি।’’

যদিও খুনের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে দীপা। এ দিন মহকুমা আদালতে পৌঁছবার আগে সে জানিয়েছে, রাতে বাড়ির সামনে প্রেমিক আপেল দিয়ে মদ খাচ্ছিলেন। আপেল কাটার জন্য একটি কাস্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে সময় তাঁর সঙ্গে পুরনো নানা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। আচমকা হাতের কাস্তে ফসকে চিরঞ্জিতের গলায় বসে যায়। নাসিমা জানিয়েছেন, ‘‘নিউ মধুবন এলাকার জামাইবাবুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। রাতে কলতলা থেকে চ্যাঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে যাই। অথচ আমাকেই খুনের চেষ্টার অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়া হল।’’ তাঁর দুই আইনজীবী শুভাশিস হালদার এবং অতনু মজুমদারের দাবি, তাঁদের মক্কেলকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে কালনার এসডিপিও ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘‘অভিযুক্ত দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে ঘটনাটির ব্যাপারে আরও কিছু বিষয় নিশ্চিত হয়েই মুখ খুলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন