গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সকালে কাজে গিয়েছিলেন। তার পর আর বাড়ি ফেরেননি ২৬ বছরের ফিরোজ় মণ্ডল। শনিবার দিনভর ছেলের খোঁজ না-পেয়ে চিন্তায় পুরো পরিবার। বাবা ভেঙে পড়েছেন। হঠাৎ বেজে ওঠে তাঁর ফোন। অচেনা নম্বর। ‘হ্যালো’ বলতেই ফোনের ও প্রান্ত থেকে ছেলের গলা শুনতে পেলেন প্রৌঢ়। কোথায় আছে, কেমন আছে সে? বাবা জিজ্ঞাসা করার আগেই ছেলে বলল, ‘‘বাবা, আমাকে অপহরণ করেছে। ৫ লক্ষ টাকা দিলে ছাড়বে বলছে।’’ ফোন পেয়ে ঘামতে থাকেন প্রৌঢ়। সাহায্যের আশায় ছুটে যান পুলিশের কাছে। তদন্তে নেমে দু’দিন পেরে ‘অপহৃত’কে উদ্ধার করল পুলিশ। তদন্তের পর থ পুলিশ। জানা যায়, ফিরোজ় নিজেই অপহরণকারী! বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য নিজেকে অপহরণ ‘করিয়েছিলেন’। ছেলের কাণ্ডে হতবাক বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থানা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, পেশায় গাড়ি ব্যবসায়ী ফিরোজ় গত শনিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওই দিন রাতে তাঁর বাবার কাছে অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। তাতে ছেলের গলা পান প্রৌঢ়। ফিরোজ় জানান, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা। হঠাৎ কোথা থেকে এতগুলো টাকার জোগাড় হবে? ভাবনায় পড়ে যান প্রৌঢ়। ছেলেকে নিয়েও চিন্তা হচ্ছিল তাঁর। শেষে অশোকনগর থানার দ্বারস্থ হন তিনি। সব শুনে তদন্তে নামে পুলিশ।
যে নম্বর থেকে ফিরোজ়ের বাবার কাছে ফোন এসেছিল, সেই নম্বরটি পরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা। অনেক চেষ্টার পরে ফিরোজ়কে শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে খুঁজে পাওয়া যায়। তবে তাঁকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, অপহরণ হওয়ার ‘নাটক’ করে বাবাকে ফোন করেছিলেন তিনি। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত জানিয়েছেন, একটি ব্যবসার জন্য তাঁর কয়েক লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই এই ‘ফন্দি’ এঁটেছিলেন। পুলিশকে ওই যুবক জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় বামনগাছি এলাকায় তিন বন্ধুর সঙ্গে মদ্যপান করছিলেন তিনি। বন্ধুদের পরামর্শে অপহৃত হওয়ার ‘নাটক’ করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, কখনও পরিবারের লোককে, কখনও তদন্তকারীদের বিভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্ত করছিলেন ফিরোজ়। শেষমেশ পুলিশের বুদ্ধির কাছে হার মানেন তিনি। কখনও বামনগাছি, কখনও কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থানা তো কখনও বর্ধমানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পুলিশের কাছে যাতে ধরা না-পড়েন, সে জন্য মোবাইলটি ‘এরোপ্লেন মোড’ করেন। তার পর অন্য একটি নম্বর থেকে ওয়াইফাই কানেকশনে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতেন। পুলিশ টোপ দিয়েছিল, শিয়ালদহে দেখা করতে। সেখানেই টাকা মিলবে। বাড়ির লোকেদের দিয়ে ওই কথা বলানো হলে ফিরোজ় সোমবার গভীর রাতে সেখানে পৌঁছে যায়। তখনই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশি জেরায় ফিরোজ় জানান, একটি অর্থলগ্নি সংস্থার ‘উপদ্রব’ মেটানোর জন্য তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গোপন জবানবন্দির জন্য যুবককে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়। ছেলেকে নিয়ে আর কথা বলতে না-চাইলেও পুলিশের ভূমিকায় খুশি বাবা।