অডি-মার্সিডিজ-সঙ্গিনীতে মেজাজটা রাজারই

বছরখানেক আগেও কখনও মার্সিডিজ, কখনও বা অডি গাড়ি নিয়ে কলকাতায় ঘুরে বেড়াতেন বছর চৌত্রিশের এক যুবক। গভীর রাত পর্যন্ত শহরের নামী পানশালায় টাকা ওড়াতেন দু’হাতে। সঙ্গে থাকতেন একাধিক বান্ধবী আর ইয়ারদোস্ত। রাজার মতো চলাফেরা। রাজার মতোই হাবভাব। সকলে তাঁকে চিনত রাজা নামেই। পোশাকি নাম শুভজিৎ সেন। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী মধুমিতার ছেলে। সারদার অন্যতম ডিরেক্টর।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

বছরখানেক আগেও কখনও মার্সিডিজ, কখনও বা অডি গাড়ি নিয়ে কলকাতায় ঘুরে বেড়াতেন বছর চৌত্রিশের এক যুবক। গভীর রাত পর্যন্ত শহরের নামী পানশালায় টাকা ওড়াতেন দু’হাতে। সঙ্গে থাকতেন একাধিক বান্ধবী আর ইয়ারদোস্ত।

Advertisement

রাজার মতো চলাফেরা। রাজার মতোই হাবভাব। সকলে তাঁকে চিনত রাজা নামেই। পোশাকি নাম শুভজিৎ সেন। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী মধুমিতার ছেলে। সারদার অন্যতম ডিরেক্টর।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, রাজ্যপাট হারিয়ে সুদীপ্ত উধাও হতেই রাজা তাঁর তিনটি বিদেশি গাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য খদ্দের খুঁজতে থাকেন। ঝাঁ-চকচকে একটি গাড়ি রাতারাতি বিক্রি করে দেন তিনি। অন্য দু’টি গাড়ি কলকাতার দুই ডিলারকে দিয়ে কিছু অগ্রিম নিয়ে নেন। গোয়েন্দারা জেনেছেন, তিনটি গাড়ির বিনিময়ে মোটা টাকা পান রাজা। এবং সেই টাকা নিয়ে কলকাতা ছাড়েন তিনি। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সুদীপ্ত এবং তাঁর সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে গ্রেফতার করা হলেও রাজাকে তখন ধরা যায়নি।

Advertisement

বেঙ্গালুরু, দিল্লির মতো শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রাজা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় মাস তিনেক আগে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। ওঠেন বেহালার বীরেন রায় রোডের শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু সব জেনেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছিল না। শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতে অজন্তা সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে ধরা পড়েন তিনি।

প্রথমে সল্টলেকে সুদীপ্তের একটি বাড়িতে থাকতেন রাজা এবং তাঁর মা মধুমিতা। রাজার স্ত্রী এবং শিশুকন্যাও থাকতেন ওই বাড়িতে। সুদীপ্তের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি তাঁর ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন সল্টলেকেরই অন্য বাড়িতে। গোয়েন্দারা জানান, সারদার ভরাডুবির পরে সল্টলেকের ওই দু’টি বাড়িই সিল করে দেওয়া হয়। পিয়ালি তখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাগুইআটির নারায়ণতলায় তাঁর মায়ের ফ্ল্যাটে উঠে যান। বুধবার বিকেলে সেই ফ্ল্যাট থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ১৫ বছরের মেয়ে এবং ১৩ বছরের ছেলে এখনও ওই ফ্ল্যাটে দিদিমার কাছেই আছে।

রাজার বিলাসিতার বহর কেমন ছিল, তার কিছুটা আন্দাজ দিয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা জেনেছেন, প্রতি রাতে লক্ষাধিক টাকা খরচ করতেন রাজা এবং সেই টাকা জোগাতেন সুদীপ্তই। সারদার অন্যতম ডিরেক্টর হিসেবে খাতায়-কলমে রাজা পেতেন মাসে আট লক্ষ টাকা। সারদার টাকাতেই কেনা হতো মার্সিডিজ, অডির মতো বিদেশি গাড়ি। রাজার এমনই মেজাজ যে, কয়েক মাস চড়ার পরেই সেই গাড়ি বিক্রি করে কিনে ফেলতেন নতুন গাড়ি। শুধু বিলাসিতা নয়, এর মধ্যে নতুন ব্যবসার হদিসও পেয়েছিলেন তিনি। নিজের গাড়ি কেনাবেচা করতে করতে গাড়ির ডিলারদের সঙ্গে মেলামেশা বেড়ে যায় তাঁর। সেই সুবাদে পুরনো গাড়ি বিক্রির ব্যবসাও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু বেহিসেবি খরচের ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত সেই ব্যবসা ডুবে যায়।

কলকাতা পুলিশের এক অফিসার জানান, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার আগে কলকাতার নামীদামি নাইট ক্লাবে নিয়মিত দেখা যেত রাজাকে। তাঁর সঙ্গে বন্ধুবান্ধব ছাড়াও থাকত জনা সাতেক হাট্টাকাট্টা বাউন্সার। ওই সব বাউন্সার সব সময়েই ঘিরে রাখত রাজাকে। রাজা তখন এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, পুলিশও তাঁকে ঘাঁটাতে সাহস পেত না। ওই পুলিশ অফিসার জানান, নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে বিদেশি গাড়িতে চড়ে ঝড়ের গতিতে কলকাতায় চক্কর কাটার শখ ছিল রাজার। সেই গাড়ির পিছনে অন্য একটি এসইউভি নিয়ে বাউন্সারেরা তাঁকে পাহারা দিত। রাজা বহু বার অন্য গাড়িতে ধাক্কা মেরে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন। পরে তা মিটমাট করে দিতে হয়েছে পুলিশকেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন