বিতর্কিত বইয়ে কারও নাম ছাঁটাই চান না শিক্ষামন্ত্রী

কিছু পরিমার্জনের দরকার আছে বলে জানিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই ‘বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি’র পাঠ স্থগিত রাখা হয়েছে। কী ধরনের পরিমার্জন প্রয়োজন, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট না-হলেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, তিনি ওই বই থেকে কারও নাম বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

কিছু পরিমার্জনের দরকার আছে বলে জানিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই ‘বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি’র পাঠ স্থগিত রাখা হয়েছে। কী ধরনের পরিমার্জন প্রয়োজন, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট না-হলেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান, তিনি ওই বই থেকে কারও নাম বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নন।

Advertisement

কয়েক দিন আগে, শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে এবং প্রি-টেস্টের মুখে ওই পাঠ্যবই বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। বইটিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠায় এবং নানা মহলে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। বইটির পঠনপাঠন আপাতত বন্ধ। প্রশ্ন ও বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ওই বইয়ের ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটিও গড়া হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের পরে বইটির সংশোধনী পরিশিষ্ট আকারে প্রকাশ করে বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হবে।

প্রস্তাবিত পরিমার্জনের অঙ্গ হিসেবেই বিতর্কিত বই থেকে কারও কারও নাম বাদ দেওয়া বা না-দেওয়ার কথা আসছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রাক্তন সাংসদ কবীর সুমন সম্পর্কে বইটিতে সবিস্তার বিবরণ থাকাটাই সরকারের আপত্তির মূল কারণ। সুমনের সঙ্গে শাসক দলের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। পাঠ্যবইটির পঠনপাঠন বন্ধ রাখায় সুমন নিজেও বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে কটাক্ষ করেছেন সরকারকে।

Advertisement

রাজ্য সরকারের তৈরি করা স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার এ দিন বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। পরে পার্থবাবু জানান, ওই পাঠ্যবইয়ের সংশোধনীর ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। বইয়ের সংশোধনী তৈরির সব দায়িত্বই পাঠ্যক্রম কমিটির। এ ব্যাপারে তাঁর কিছুই বলার নেই বলে জানান মন্ত্রী। তবে তিনি যে বই থেকে কারও নাম বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নন, সে-কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। একই ভাবে উল্লেখ থাকা উচিত, এমন কারও নাম বইয়ে অনুল্লিখিত থেকে যাক, এটাও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চান না।

শিক্ষামন্ত্রী এ দিন কবীর সুমনের নাম উল্লেখ না-করলেও বাদ দেওয়া বা না-দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই গায়কই তাঁর বক্তব্যের লক্ষ্য বলে মনে করছেন অনেকে। আবার ওই পাঠ্যবইয়ে বাংলা গান সংক্রান্ত অধ্যায়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্রদের নাম নেই কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। মন্ত্রী আসলে এঁদের নামও পাঠ্যবইয়ে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকী ওই বইয়ে কবীর সুমনের সমসাময়িক অন্য এক গায়ক, নচিকেতা চক্রবর্তীর উল্লেখও করা হতে পারে বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। যদিও শিক্ষামন্ত্রী এ দিন কারও নামই উল্লেখ করেননি।

বইটি কবে ফের পড়ানো হবে?

“পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যানকে বলেছি, আগামী সোমবারের মধ্যে ওই পরিশিষ্টের (সংশোধনী) খসড়া তৈরি করে ফেলতে হবে,” বলেছেন পার্থবাবু। এ মাসের মধ্যেই সংশোধনী তৈরি করে বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। যত দ্রুত সম্ভব সেই কাজ শেষ করে আবার বইটির পঠনপাঠন শুরু করতে চাইছে সরকার।

দ্বাদশের ওই বিতর্কিত বাংলা বই ছাড়াও পাঠ্যক্রম কমিটির গঠন বিষয়ে এ দিন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর। ভবিষ্যতে দুই প্রবীণ শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে এগোনোর জন্য পাঠ্যক্রম কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন পার্থবাবু। ওই দু’জন হলেন, বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত কলেজ-শিক্ষক গণেশ বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন