বিবাহিত মেয়েও পাবেন পোষ্যের চাকরি: হাইকোর্ট

কর্মরত অবস্থায় কোনও সরকারি কর্মীর মৃত্যু হলে বিবাহিত মেয়েরা চাকরি পাবেন না বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার তা খারিজ করে দিয়ে বলেছে, কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীর সন্তানকে পোষ্য হিসেবে যে-চাকরি দেওয়া হয়, মৃতের বিবাহিত মেয়েও তা অবশ্যই পেতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

কর্মরত অবস্থায় কোনও সরকারি কর্মীর মৃত্যু হলে বিবাহিত মেয়েরা চাকরি পাবেন না বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার তা খারিজ করে দিয়ে বলেছে, কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীর সন্তানকে পোষ্য হিসেবে যে-চাকরি দেওয়া হয়, মৃতের বিবাহিত মেয়েও তা অবশ্যই পেতে পারেন। তবে তাঁর ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হবে। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার এই রায় দিয়েছেন।

Advertisement

২০০৮ সালে রাজ্য সরকার এই সব ক্ষেত্রে বিবাহিত মেয়েদের চাকরির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। বিচারপতি বলেন, ওই বিজ্ঞপ্তি সংবিধানের ১৪ ধারার পরিপন্থী। ওই ধারায় বলা রয়েছে, কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পরে বিবাহিত ছেলে যদি চাকরি পেতে পারেন, তা হলে বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে তার কোনও রকম বৈষম্য করা যায় না। আইনে বৈষম্যের স্থান নেই। আবেদনকারিণী পূর্ণিমা দাসকে অবিলম্বে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

বীরভূমের নবগ্রামের বাসিন্দা, বড়াগ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী হারুচন্দ্র দাস ২০১১ সালের মার্চে মারা যান। হারুবাবুর স্ত্রী ও তিন মেয়ে আছেন। তাঁদের সকলের সম্মতিতে ছোট মেয়ে পূর্ণিমা দাসকে চাকরি দেওয়ার জন্য ওই পরিবার আবেদন করে পঞ্চায়েত দফতরের কাছে। ওই দফতর জানিয়ে দেয়, এই ক্ষেত্রে বিবাহিত মেয়েকে চাকরি দেওয়া যাবে না। পূর্ণিমাদেবী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৩ সালের জুনে পঞ্চায়েতসচিব হাইকোর্টকে জানান, বিবাহিত মেয়েদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে আইনি সমর্থন নেই।

Advertisement

পূর্ণিমাদেবীর আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মুম্বই হাইকোর্ট আগেই এই ব্যাপারে বিবাহিত মেয়েদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তাঁর যুক্তি, কর্মরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে পরিবার যাতে ভেসে না-যায়, সেই জন্যই রাজ্য সরকার এক জনকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যোগ্যতাসম্পন্ন আর কেউ না-থাকলে পরিবারকে বাঁচাতে বিবাহিত মেয়ের উপরেই ভরসা করতে হবে।

তবে সরকারের বক্তব্য, বিবাহিত মেয়ে অন্য পরিবারের বধূ। তাই তাঁকে চাকরি দিলেও মায়ের পরিবারকে তিনি সাহায্য না-ও করতে পারেন। অঞ্জনবাবু বলেন, বিবাহিত ছেলে চাকরি পাওয়ার পরে সাহায্য করবেনই, এমন নিশ্চয়তা কোথায়! বিচারপতি জানিয়ে দেন, আইনে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বৈষম্য করার কোনও অবকাশ নেই। চাকরির ক্ষেত্রেও সরকার তা করতে পারে না।

আদালতের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য মৃতের পরিবারকে বাঁচানো। মেয়ে বিবাহিত বলেই তিনি আর বাবার পরিবারের সদস্য নন, এ কথা আইন স্বীকার করে না। মুখ্যসচিবকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবিলম্বে পূর্ণিমা দাসকে চাকরি দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন