অসমের বরপেটায় জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার ছ’জনকে গাড়িতে তুলছে পুলিশ। শুক্রবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্র ধরে অসমের বরপেটা জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে অসম পুলিশ ছ’জনকে গ্রেফতার করল। ধৃতদের মধ্যে ৬০ বছরের প্রৌঢ় যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ২০ বছরের সদ্য যুবাও। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দেওয়া সূত্রের ভিত্তিতে বরপেটায় গত তিন দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে ছ’জনকে ধরা হয়েছে। তবে অসম পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে এনআইএ। সুতরাং ধৃতদের তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে।
অসম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতে মৌলবাদী সংগঠনগুলি যে নিজেদের ঘাঁটি মজবুত করছে তার আঁচ আগেই পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বর্ধমানের বিস্ফোরণ এবং বরপেটা থেকে ছ’জনের গ্রেফতার হওয়া সেই সন্দেহকেই নির্দিষ্ট ভিত্তি দিল। প্রাথমিক তদন্তে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ জানতে পেরেছে, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি মাদ্রাসা থেকে ‘দীক্ষিত’ ও ‘নির্দেশপ্রাপ্ত’ এই ছ’জনের সঙ্গে বাংলাদেশের জামাত-উল-মুজাহিদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে অসম পুলিশ।
এডিজি (এসবি) পল্লব ভট্টাচার্য জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃত দুই মহিলা, রাজিয়া ও আলিমাকে জেরা করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অসমের কয়েক জনের নাম জেনেছিল। তারা বিষয়টি অসম পুলিশকে জানায়। এর পর স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অফিসাররা তিন দিন ধরে বরপেটায় ঘাঁটি গেড়ে বসে থেকে সদর ও চেঙ্গা থানা এলাকার অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছ’জনকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে রয়েছে কাহিকুচির বাসিন্দা সিরাজ আলি খান (৫৩) ও তার ছেলে সইফুল ইসলাম (২০), রৌমারিপথার গাঁওয়ের বাসিন্দা জহিরউদ্দিন (৬০) ও তার ছেলে গোলাম ওসমানি (২৩), করিহার বাসিন্দা সরবেশ আলি (৩৬) ও কলগাছিয়ার রফিকুল ইসলাম (৩৯)।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সন্দেহ ছিল, বর্ধমানে তৈরি আইইডি অসম সীমান্ত দিয়েও ও পারে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। আপাতত ধৃতদের জেরা করে সেই সব বিস্ফোরকের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এসবি সূত্রের খবর, ধৃত ব্যক্তিদের নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেখানকার মাদ্রাসাতেই শাকিল, সুবহান, রাজিয়া, আলিমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। ডিজি খগেন শর্মা জানিয়েছেন, ধৃতদের কয়েক জন মৌলবাদী সংগঠনের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছে। সকলের সঙ্গেই জামাতের যোগাযোগ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গেই জামাতের লোকজন অসমে ঢুকেছে। দীর্ঘদিন থেকেই কোকরাঝাড়, ধুবুরি, বরপেটায় তাদের আনাগোনা। বাংলাদেশি মৌলবাদের প্রসারে এ পারের মাটিতে যে ছাতার তলায় সব মঞ্চ রয়েছে তা হল ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’। পিএফআইয়ের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায়। হুজি, হরকত-উল-মুজাহিদিন, সিমি, আইএম বা জামাতের হয়ে কাজ করতে আসা সদস্যদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া, বাসস্থান জোটানোর মতো বিষয়গুলি পিএফআই-ই দেখে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদত জোগাড় করার দায়িত্বও তাদের। আইবির দাবি, বড়োভূমিতে সাম্প্রতিক কালে জনজাতি সংঘর্ষের পিছনেও পিএফআই-এর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।