সারদা-তদন্ত

বস্ত্র ব্যবসায়ীকে কয়েক কোটি, সন্দিগ্ধ সিবিআই

পোশাক-আশাকের কারবারের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর কস্মিনকালে কোনও যোগ ছিল না। অথচ তাদের কাগজপত্রে এক বস্ত্র-ব্যবসায়ীর সঙ্গে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন নথিভুক্ত রয়েছে! যার বিস্তারিত খোঁজ-খবর করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের। সারদা-কেলেঙ্কারি সম্পর্কে তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে, তার ভিত্তি সিবিআইয়ের একাংশের সন্দেহ, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু ‘প্রভাবশালী’ রাজনৈতিক ব্যক্তি সারদা থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন। যদিও তাঁদের কারও নামে এমন কোনও লেনদেনের কথা সংস্থার খাতায়-কলমে নেই।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৬
Share:

পোশাক-আশাকের কারবারের সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর কস্মিনকালে কোনও যোগ ছিল না। অথচ তাদের কাগজপত্রে এক বস্ত্র-ব্যবসায়ীর সঙ্গে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন নথিভুক্ত রয়েছে! যার বিস্তারিত খোঁজ-খবর করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের।

Advertisement

সারদা-কেলেঙ্কারি সম্পর্কে তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে, তার ভিত্তি সিবিআইয়ের একাংশের সন্দেহ, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু ‘প্রভাবশালী’ রাজনৈতিক ব্যক্তি সারদা থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন। যদিও তাঁদের কারও নামে এমন কোনও লেনদেনের কথা সংস্থার খাতায়-কলমে নেই। এবং সারদা-নথিতে ওই বস্ত্র-ব্যবসায়ীর যোগের নেপথ্যে এমনই এক ‘প্রভাবশালী’র ভূমিকা দেখছেন তদন্তকারীরা। কী রকম?

সিবিআই-সূত্রের ব্যাখ্যা: পূর্ব-কলকাতার মৌলালির ওই বস্ত্র-ব্যবসায়ীর নামেই সারদা থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিটি। সারদার তরফে তাঁকে দেওয়া সব টাকা পাঠানো হয়েছে ওই ব্যবসায়ীর নামে। অন্তত সারদার নথি তেমনই বলছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। “যদিও ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সারদার কোনও সম্পর্ক নেই।” জানাচ্ছেন এক অফিসার।

Advertisement

ওঁরা আপাতত সেই বস্ত্র-ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সিবিআই-সূত্রের খবর: বিভিন্ন সময়ে সারদার বিভিন্ন কর্মী-অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। সিবিআই গোয়েন্দারা সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকেও উল্লিখিত বস্ত্র-ব্যবসায়ী সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। সুদীপ্তের একদা ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও এ প্রসঙ্গে বিশেষ মুখ খোলেননি।

সারদা-তদন্তে নেমে আরও কিছু অসঙ্গতি সিবিআইয়ের নজরে এসেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুদীপ্তের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন কর্মচারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখনও মোটা অঙ্কের টাকা জমা রয়েছে, যা কি না তাঁদের বেতনবাবদ প্রাপ্ত অর্থের তুলনায় অনেক বেশি। বাড়তি টাকার উৎস কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন বেশ কিছু কর্মচারীর অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধের জন্যও সিবিআইয়ের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলিকে।

এ দিকে সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্তদের সাহায্য করা এবং তদন্ত চলাকালীন প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের কিছু পদস্থ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে। ঠিক রয়েছে, সিবিআই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর ডিরেক্টর রণজিৎ সিংহ সম্প্রতি দিল্লিতে জানিয়ে দিয়েছেন, সারদা-তদন্তে গঠিত রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল (সিট)-এর কাছ থেকে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব নথি পাওয়া না-গেলে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। সেই সময়সীমা পার হতে বাকি আর মাত্র তিন দিন। সিবিআই’কে নথি সরবরাহের ব্যাপারে সিটের তরফে অবশ্য কোনও কর্তা মুখ খুলছেন না।

আবার সারদা-তদন্ত প্রসঙ্গে সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)-র ভূমিকা নিয়েও সিবিআই অফিসারেরা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ওঁদের দাবি: ২০১০-এর পরে সেবি-র একাধিক কর্তার সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের যে শুধু যোগাযোগ হয়েছিল তা-ই নয়, সারদার এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সেবি-অফিসারদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও করতেন। তখন কোনও টাকার লেনদেন হয়েছিল কিনা, সিবিআই তা যাচাই করছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, সারদার কারবার বন্ধ করার নির্দেশ পাওয়ার পরেও সেবি যে কোনও পদক্ষেপ করেনি, তার পিছনে টাকার লেনদেনের ভূমিকা থাকতেই পারে।

এমতাবস্থায় সেবি-র কিছু অফিসারকেও সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে ব্যুরো-সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement