খেয়াল খুশি মতো ভর্তি ফি রুখতে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বেসরকারী বিএড কলেজগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করলেন উপাচার্য রতনলাল হাংলু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এটিকে রুটিন বৈঠক বলেই দাবি করেছে। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বেসরকারি বিএড কলেজে খেয়াল খুশি মতো ভর্তি ফি রুখতে বিশ্ববিদ্যালয়ই ব্যাঙ্ক ড্রাফটে ভর্তি বাবদ নির্দিষ্ট টাকা নেবে। তারপর সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোকে সেই ব্যাঙ্ক ড্রাফট দেওয়া হবে। কাউন্সেলিংয়ের মতো ভর্তির প্রক্রিয়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা কোর কমিটি পরিচালনা করবে। ভর্তি হওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আর কলেজে কলেজে ঘুরতে হবে না। কোন বিএড কলেজে ক’টা আসন খালি আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই যেমন সেই তথ্য মিলবে, তেমনি নির্দিষ্ট দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া কেন্দ্রেই সব কলেজগুলির ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে।
চলতি বছর প্রথম পর্বের কাউন্সেলিংয়ের পরেই চাপড়ার ভক্তবালা বিএড কলেজের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড-এ ভর্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বেসরকারি বিএড কলেজগুলো আকাশ ছোঁওয়া টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ। তাই এ দিনের বৈঠকে উপাচার্য কলেজগুলোর কর্তাদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য ও শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়েই দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, “সেই পুরাণের সময় থেকে শিক্ষকই সমাজে গুরু। অভিভাবকের সম্মান পেয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিএড কলেজে যারা পড়তে আসেন পরে তাঁরাই ফিরে গিয়ে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন। যদি ভর্তিপ্রক্রিয়া থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তাহলে এই শিক্ষকরা কি শিক্ষা পাবেন যা তাঁর পরবর্তী প্রজন্মকে দেবেন?” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আর সততা থাকা উচিত। নইলে সেই শিক্ষা মূল্যহীন।” উপাচার্য এ দিন নদিয়া জেলার মফস্বল ও গ্রামগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে গরিব পরিবার থেকে আসা ছাত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য কলেজ কর্তাদের অনুরোধ করেন।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৪টি বি এড কলেজের মধ্যে ৫০টির কর্মকর্তারা এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি এই বিএড কলেজগুলি সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কল্যাণী ইউনিভার্সিটি সেল্ফ-ফিনান্স টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন। এ দিন তাঁরাও তাঁদের সমস্যার কথা উপাচার্যকে জানান। অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোর উপর চলতি বছরে অনেক বেশি ফি বাড়িয়েছে। প্রতি বছর বিএডে ভর্তির জন্য অস্থায়ী অনুমোদন ফি ৫০হাজার টাকা বেড়ে এবার ১লক্ষ ২৫হাজার টাকা করা হয়েছে। এমন বেশ কিছু নতুন বোঝার ফলে আমরাও দিশেহারা।” অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের দাবি, এবার ভক্তবালায় ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বহু কলেজে ২০-৫০শতাংশ আসন ফাঁকা থেকে গিয়েছে। সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপে যাতে ভর্তি করানো যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।