শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন শাখায় স্টেশন সংলগ্ন দোকানগুলিতে কয়েক দিন ধরে বারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। তদন্ত শুরু করলেও কেন বারবার আগুন ধরছে সেটা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি দমকল ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ। তবে দু’দিনের ঘটনায় পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার ও ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও আরপিএফ।
গত বুধবার দুপুরে বনগাঁ শাখার দুর্গানগর স্টেশনে আগুন ধরেছিল ১৪টি দোকানে। রবিবার আবার ওই একই শাখার ঠাকুরনগর স্টেশন সংলগ্ন ৭টি দোকানে আগুন লাগে। শনিবার রাতে একইসঙ্গে আগুন লাগে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার গড়িয়া স্টেশনেও। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, সব দোকানগুলিই রেলের জায়গায় জবরদখল করে বানানো।
শনিবার কী ঘটেছে গড়িয়া আর ঠাকুরনগরে? পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, ওই দিন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ গড়িয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দোকানগুলিতে আচমকা আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। শর্ট সার্কিট থেকে ওই আগুন লাগে বলে পুলিশের অনুমান। যদিও আগুন লাগানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সনৎকুমার মালিয়া স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি রাতের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন।
ভোর চারটে নাগাদ ঠাকুরনগর স্টেশনের গায়ে থাকা ৭টি দোকানে আগুন লাগে। ৪টি ঝুপড়ি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। দোকানগুলির মধ্যে একটি কম্পিউটার, দুটি মাংস বিক্রি ও কিছু চায়ের দোকানও ছিল। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। এই ঘটনায় আরপিএফ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
কিন্তু বারবার স্টেশন চত্বর বা প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন এলাকায় জবরদখল ঝুপড়িগুলিতে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় দোকানদারদের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেউ বলছেন, রাজনৈতিক চক্রান্ত। আবার কেউ কেউ বলছেন জবরদখল উচ্ছেদ করার চেষ্টাও হতে পারে। পুলিশ অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চায়নি। শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার উত্তম নস্কর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ড।” তবে ঠাকুরনগর ও গড়িয়ার ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার ও এক জনকে আটক করা হয়েছে।
শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে যে ভাবে জবরদখলকারীরা পসরা সাজিয়ে জাঁকিয়ে বসেছেন তাতে যাত্রীদের অসুবিধা তো হচ্ছেই, ট্রেন চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও রেল কর্তৃপক্ষ ওই সব জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে পারছেন না। গত ২ অক্টোবর থেকে গোটা দেশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর সাফাই অভিযান প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রেলেও শুরু হয়েছে ওই সাফাই অভিযান। কিন্তু রেলকর্তাদের বক্তব্য, প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে জবরদখল তুলতে না পারলে সাফাই করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। কারণ, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হলে রাজ্য সরকারই তা সামলাবে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ওই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে নীরব থাকায় তা করা যাচ্ছে না। উল্টে নিত্যই জবরদখল করা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।