ধৃত দম্পতি ৫৭ বছরের ডেভিড টার্পিন এবং ৪৯ বছরের লুইস আনা টার্পিন
প্রথমে শোনা গিয়েছিল বন্দি রয়েছে তেরো জন অপুষ্ট শিশু থেকে কিশোর কিশোরী। পরে জানা যায়, শুধু কিশোর-কিশোরী নয়, এ তালিকায় আছে ২৯ বছরের যুবকও। যাদের বাড়িতে আটকে রেখে দীর্ঘদিন নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরই বাবা-মা। কাউকে কাউকে আবার অন্ধকার ঘরে বিছানায় চেন দিয়ে বেঁধেও রেখেছেন তাঁরা। এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডের পিছনে জড়িয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি। তাঁদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বন্দি এক ১৭ বছরের কিশোরী গত রবিবার পালিয়ে যাওয়ায় ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে। মেয়েটি পালানোর সময় একটি মোবাইল খুঁজে পেয়েছিল। সেটা থেকেই পুলিশকে সব জানিয়েছে সে। বয়স ১৭ হলেও অপুষ্টিতে মেয়েটি এতটাই রুগ্ণ চেহারার, যে পুলিশের মনে হয়েছিল, তার বয়স দশের বেশি নয়। রিভারসাইড কান্ট্রি শেরিফ ডিপার্টমেন্ট দাবি করেছে, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে পেরিস-এর ওই বাড়িটিতে মোট ১৩ জন বন্দি ছিল। যাদের বয়স ২ থেকে ২৯-এর মধ্যে! এই এলাকাটি ।
ধৃত দম্পতি ৫৭ বছরের ডেভিড টার্পিন এবং ৪৯ বছরের লুইস আনা টার্পিনকে জামিনের জন্য ৯০ লক্ষ ডলার দিতে হবে। টার্পিনদের তিনটি গাড়ি ও একটি ভ্যান। একটি নীল গাড়িতে বাচ্চার বসার আলাদা জায়গা করা আছে, যা দেখে পুলিশের ধারণা, কখনওসখনও বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হত। তবে আশপাশের লোকজনের দাবি, ওরা খুব কম সময়েই বাইরে আসত। আর যখনই চোখে পড়ত, ওদের দেখে অসম্ভব দুর্বল, রোগা মনে হত। ওদের আচার আচরণও স্বাভাবিক বলে ঠেকত না প্রতিবেশীদের কাছে। তবে ভিতরে এমন সব কাণ্ড ঘটত শুনে অবাক হয়ে গিয়েছেন তাঁরাও। ফেসবুক পেজে কিন্তু বেশ কয়েকটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সপরিবার টার্পিন দম্পতিকে দেখা গিয়েছে। কেতাদুরস্ত পোশাকে ১৩ জন ছেলেমেয়েকেও। কাউকে কাউকে সামান্য রোগা লাগলেও তেমন চোখে পড়ার মতো কিছু নয়। সে সব ছবির কোনওটা গত বছরের। কোনওটা তারও আগের।
পুলিশের বক্তব্য, ‘‘অন্ধকার এবং দুর্গন্ধযুক্ত ঘরে বেশ কয়েক জন শিশুকে চেন আর তালা দিয়ে বিছানায় আটকে রাখা হত। কিন্তু ধৃত বাবা-মা কেন এই ভাবে ছেলেমেয়েদের বন্দি করে রাখলেন, তার কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারেননি। পুলিশের দাবি, ১৭ বছরের মেয়েটির কাছে খবর পেয়ে তাদের মনে হয়েছিল ওই বাড়িতে ১২ জন শিশু রয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে চমকে যায় পুলিশ। দেখা যায় তাদের মধ্যে সাত জন প্রাপ্তবয়স্ক। যাদের বয়স ১৮-২৯। প্রত্যেকেই খুব অপুষ্টির শিকার এবং শরীরে ভর্তি ময়লা।
বন্দি এই দলটি দীর্ঘদিন খেতে পায়নি শুনে পুলিশ তাদের খাওয়ার বন্দোবস্ত করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গিয়েছে, টার্পিনরা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। রেকর্ড বলছে, ডেভিড টার্পিন একটি স্কুলের প্রধান। সেটি ২০১১ সালে খুলেছিল। আদালতের কাগজ অনুযায়ী, ওই বছরই টার্পিনরা জানান স্কুল খুলতে গিয়ে ৫০ লক্ষ ডলারের ঋণ ঘাড়ে চেপেছে। তাঁরা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন। অথচ ওই সময়েই ডেভিড একটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যেখানে তাঁর বেতন বছরে ছিল ১৪ লক্ষ ডলার।
টার্পিন দম্পতির এই ভয়ঙ্কর কাজ মনে করাচ্ছে অতীতের বেশ কিছু এই ধরনের ঘটনা। ক্লিভল্যান্ডে অ্যারিয়েল কাস্ত্রো নামে এক ব্যক্তি তিন মহিলাকে প্রায় এক দশক ধরে ধর্ষণ করেছিলেন। এক মহিলা পালিয়ে গিয়ে ঘটনা ফাঁস করেন। ২০১৩ সালে ধরা পড়ে অ্যারিয়েল। ক্যালিফোর্নিয়াতেই জেসি ডুগার্ড নামে এক ১১ বছরের শিশুকে ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধর্ষণ করেছিল ফিলিপ গ্যারিডো। ২০০৯ সালে উদ্ধার করা জেসিকে।