প্রথমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চড়া সুর, তার পরে অনুদান বাতিলের কথা ঘোষণা। প্রবল চাপে পড়েছে পাকিস্তান। পাল্টা চাপ দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এ বার আমেরিকা বিরোধী সুর চড়াচ্ছে পাকিস্তান। ছবি: এএফপি।
জোর জল্পনা শুরু হল পাকিস্তানের প্রত্যাঘাত নিয়ে। আমেরিকাকে আর কোনও সামরিক এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা নয়। ঘোষণা করলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তবে ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করার বিষয়ে আমেরিকাকে সরাসরি কিছু জানায়নি পাকিস্তান।
কয়েক দিন আগেই ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছে, সামরিক এবং নিরাপত্তা খাতে পাকিস্তানকে যে অনুদান বহু বছর ধরে দিয়ে আসছে আমেরিকা, তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অনুদান আটকেও দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। ইসলামাবাদও এ বার পাল্টা পদক্ষেপ করল বলে পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। আমেরিকাকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খুররম দস্তগির খান।
মঙ্গলবার পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন বলে জানা গিয়েছে। পাক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউজ’ সূত্রের খবর, গতকাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ-এ (আইএসএসআই) আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে ভাষণ দিচ্ছিলেন খুররম দস্তগির খান। আমেরিকাকে যে সামরিক এবং গোয়েন্দা সহায়তা এত দিন ধরে দিয়ে আসছিল পাকিস্তান, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সেখানেই জানান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। যাবতীয় হিসেব টেবিলে রেখে আমেরিকার সঙ্গে কথাবার্তা খুব স্পষ্ট করে সেরে ফেলার সময় হয়ে গিয়েছে— এমন মন্তব্যও করেন খুররম।
শুধু পাকিস্তানের মন্ত্রীরা নন, বিভিন্ন সংগঠনও আমেরিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে পাকিস্তানের নানা প্রান্তে। ছবি: এএফপি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১ জানুয়ারি টুইট করে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দাতা’ তকমা দিয়েছেন। আমেরিকার কাছ থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার অনুদান নিয়েও পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন। পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গতকালের ভাষণে ট্রাম্পের সেই অভিযোগের জবাবও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গত ১৫ বছর ধরে বিপুল ব্যয় এবং সৈনিকদের জীবনহানির মূল্যেও আফগান যুদ্ধে আমেরিকা জিততে পারেনি বলে তিনি দাবি করেছেন। আফগানিস্তানের মাত্র ৪০ শতাংশ এলাকাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে আমেরিকা, মন্তব্য পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা অঞ্চলগুলির কথা ভাবা উচিত আমেরিকার।’’ যে অঞ্চল এখনও আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসেনি, জঙ্গিরা সেই অঞ্চলেই সক্রিয় এবং সেখানে ঘাঁটি গেড়েই তারা কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ইঙ্গিত।
আরও পড়ুন: তিন দেশ সড়ক প্রকল্পে বেঁকে বসল মায়ানমার
পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই সব মন্তব্য চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। আমেরিকাকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে যে ঘোষণা পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী করেছেন, তা পাকিস্তানের সরকারি ঘোষণা কি না, সে সম্পর্কে ‘দ্য নিউজ’ কোনও মন্তব্য করেনি। কিন্তু খুররমের মন্তব্যকে পাকিস্তানের সরকার অনুমোদন করছে না, এমন কোনও বিবৃতিও ইসলামাবাদের তরফ থেকে প্রকাশিত হয়নি।
আরও পড়ুন: ‘শান্তি’ অলিম্পিক্সে সাড়া, এক টেবিলে দুই কোরিয়া
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ভয়েস অব আমেরিকা’ অবশ্য জানাচ্ছে, দু’দেশের মধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ হওয়ার কোনও খবর ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাসের কাছে নেই। দূতাবাসের মুখপাত্র রিচার্ড স্নেলসায়ার বলেছেন, ‘‘সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে সরকারি ভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’