বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপূর্ব ভারতকে টেনে ফের মন্তব্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে নিয়ে একটি মিলিত আর্থিক পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। বস্তুত, উত্তরপূর্ব ভারতকে টেনে এর আগেও মন্তব্য করেছিলেন ইউনূস। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছিল। এ বার ফের উত্তরপূর্ব ভারতের প্রসঙ্গ টেনে মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। উত্তরপূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, এই অঞ্চলগুলি আলাদা ভাবে কাজ করার বদলে এক সঙ্গে কাজ করলে বেশি লাভবান হবে।
নেপালের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানা বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন। গত সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি বৈঠক করেন রানা। বাংলাদেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ‘বাসস’ অনুসারে ওই আলোচনায় ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। আলাদা ভাবে নয়, একসাথে কাজ করলেই আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারব।” বস্তুত, গত মার্চে চিন সফরে গিয়ে নিজের চিনা দেশে বিনিয়োগ টানতে উত্তরপূর্ব ভারতের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন তিনি।
ওই সময়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি করার জন্য চিনকে অনুরোধ করেন ইউনূস। সেই সূত্রে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টায় তিনি বলেন, “সমুদ্রের (বঙ্গোপসাগর) একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” চিন এবং বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন যে, “ভারতের পূর্ব দিকের সাত রাজ্যকে বলা হয় সাত বোন। এগুলি স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা। এদের সমুদ্রে পৌঁছোনোর কোনও পথ নেই।” ভৌগোলিক এই অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করার যে ‘বড় সুযোগ’ চিন পাবে, তা স্পষ্ট করেন ইউনূস।
নিজের দেশে চিনা বিনিয়োগ আনতে ইউনূস কেন ভারতের প্রসঙ্গ তুলে আনলেন, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল সেই সময়। উত্তরপূর্বের রাজ্য অসমের বিজেপি শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “মুহাম্মদ ইউনূসের এই ধরনের প্ররোচনামূলক মন্তব্যকে হালকা ভাবে নেওয়া হচ্ছে না।” ঘটনাচক্রে ইউনূসের ওই মন্তব্যের পর পরই তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মলেনের পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হন ইউনূস। পরে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক জানায়, ওই পার্শ্ববৈঠকে ঢাকাকে ‘বাক্সংযম’-এরও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইউনূসকে তিনি জানিয়েছেন, ‘পরিবেশ কলুষিত করতে পারে এমন কথা’ এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তবে নেপাল, ভুটান এবং উত্তরপূর্ব ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশের সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মন্তব্যের পরে ভারতের তরফে কোনও বিবৃতি এখনও পর্যন্ত আসেনি।