বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে মৃত্যু হয় আবু সাঈদের। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে পুলিশের হাতে আর কোনও ‘মারণাস্ত্র’ থাকবে না! বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ‘মারণাস্ত্র’ থাকবে শুধুমাত্র বাংলাদেশের ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ (এপিবিএন) বা সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে। সাধারণ পুলিশের কাছে থাকা সব ‘মারণাস্ত্র’ সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশে গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে মৃত্যু হয়েছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আবু সাঈদের। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরবর্তী সময়ে পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র না রাখার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জেলাশাসকদের সম্মেলনেও বেশ কয়েক জন জেলাশাসক পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র না রাখার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন। এই আবহে সোমবার বৈঠকে বসে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ওই বৈঠকশেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে। পুলিশের অভিযানে মারণাস্ত্রের প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি।
‘প্রথম আলো’ অনুসারে, চাইনিজ় রাইফেল, সাব মেশিন গান, ৯ এমএম পিস্তলের মতো ‘মারণাস্ত্র’ পুলিশের হাতে না-রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশের হাতে কী ধরনের অস্ত্র থাকবে, তা স্থির করতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি। সরকারি এই সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আজ শুধু সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে কোনও সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হয় না। কিছুটা সময় লাগবে।”
বস্তুত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের একটি রিপোর্টেও সাঈদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সাঈদের হত্যা পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটিয়েছে এবং এটি বিচার-বহির্ভূত হত্যা বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ ছিলেন সাঈদ। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। গত ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের রবার বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন তিনি। ছোট্ট বাঁশের লাঠি নিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে পুলিশের উদ্যত বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন সাঈদ। কিন্তু পুলিশের বন্দুক থেকে ছুটে আসা পর পর রবার বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন মাটিতে। তাঁর মৃত্যু ঘিরে বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছিল।