একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল কিরগিজস্তান। স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীনতার। সোভিয়েতের পতনে সেটা এল ১৯৯১তে। ২০০৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নতুন সংবিধান হল। ২০০৫-এর মার্চে নির্বাচন। প্রতিবেশী দেশ চিন, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান সেটা চায়নি। নির্বাচন আবার কীসের। তারা যেমন আছে কিরগিজস্তান তেমনই থাক। অকারণ গণতন্ত্রের চাষ অসহ্য। তাদের ইচ্ছেই পূর্ণ হল। ভোট শেষ হতে না হতেই ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে গণবিক্ষোভ। রাষ্ট্রপতি আসকার আকায়েভ দেশছাড়া। পরের রাষ্ট্রপতি কুরমানবেক বাকিয়েভও গণবিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত।২০১১-তে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আলমাজবেক আতামবায়েভ কোনওরকমে ক্ষমতায় টিকে আছেন। মধ্য এশিয়ার অন্য দেশগুলো কড়া নজরে রেখেছে কিরগিজস্তানের উপর। ঠিক একই চাপ বাংলাদেশের ওপর। পাকিস্তান চায় না বাংলাদেশ গণতন্ত্রমুখী হোক। দীর্ঘকাল সামরিক শাসনে মদত দিয়ে গণতন্ত্র নস্যাৎ করেছে।এখন সন্ত্রাসে ইন্ধন জুগিয়ে সব লণ্ডভণ্ড করতে চাইছে। আমেরিকার কাছে তদ্বির করছে, বাংলাদেশকে ‘মডারেট ইসলামিক স্টেট’ হিসেবে গণ্য করা হোক। চূড়ান্ত প্রতিকূলতায় গণতন্ত্রের পালে হাওয়া লাগিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাজনীতির শিকড় মাটির গভীরে ছড়াচ্ছেন। দেশের মানুষ তাঁর সঙ্গে। ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ বা ইউপি নির্বাচন। ভোট ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই। এ যেন জাতীয় উৎসব। নির্বাচনী প্রচারে সরগরম গ্রামগঞ্জ। শহর কিন্তু বাদ। ভোট দেবেন তাঁরাই যাঁরা মাটির কাছাকাছি। তাঁদের ইচ্ছেতেই সিলমোহর পড়বে যোগ্য রাজনৈতিক দলের প্রতীকে। সেখানে শহরের সঙ্গে মিল নাও থাকতে পারে।
নির্বাচনী যুদ্ধে প্রধান দুই দল আওয়ামি লিগ, বিএনপি মুখোমুখি। একে অন্যকে টক্কর দিতে ব্যস্ত। দেশের শাসন ক্ষমতা আপাতত আওয়ামি লিগের হাতে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় তোলা সুবিধে। তাদের সমালোচনায় বিদ্ধ করছে বিএনপি। আওয়ামি লিগেরও বলার কথা অনেক। তারা বলছে আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য আমরা গণতন্ত্রকে জিতিয়েছি। বিরোধী ষড়যন্ত্রকে ডানা তুলতে দিইনি। ইউপি নির্বাচন আগে ছিল অরাজনৈতিক। সবটাই ছিল নির্দলীয়। এবার রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সম্মুখ সমরে। মানুষই বলবেন তাঁরা কাদের চান।
প্রচারের জোয়ারে এগিয়ে আওয়ামি লিগ। তারা শাসক দল। সুবিধেজনক অবস্থায় থাকবেই। তাই বলে বিএনপি-ও কম যাচ্ছে না। অগোছালো ঘর গুছিয়ে, রুখতে চাইছে আওয়ামি ঢেউ। সমস্যা অন্য জায়গায়। বিএনপি-ই বিএনপির শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক বিএনপি নেতা দল ছেড়ে আওয়ামি লিগে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সাদরে বরণ করেছে আওয়ামি লিগ। দলত্যাগীরা নির্বাচনী টিকিটও পেয়েছেন অবলীলায়। এতে বিএনপি যেমন ক্ষুব্ধ, অভিমান হচ্ছে আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদেরও। তাঁরা বলছেন, নতুন অতিথিদের স্বাগত জানাতে গিয়ে বঞ্চনা করা হচ্ছে পুরোনদের।
ভোলার বোরহামউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নে প্রার্থী হয়েছেন আইনজীবী আসানুজ্জামান বাবুল। তিনি বিএনপি নেতা ছিলেন। সদ্য আওয়ামি লিগে যোগ দিয়েই মনোনয়ন পেয়েছেন। পুরোনরা মানতে চাইছেন না।ঝালকাঠির কাঠকাঠালিয়া উপজেলার পাটকেলঘাটা ইউনিয়নে আওয়ামি লিগ প্রার্থী শিশির দাস। হওয়ার কথা ছিল শহিদুল ইসলাম হৃদয়ের। হৃদয়ের অভিযোগ, টাকার খেলায় তিনি পরাস্ত। তিনি অবশ্য হাল ছাড়েননি। নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। জিতে জবাব দিতে চান।
প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একেবারে তৃণমূল স্তরের নেতৃত্বের হাতে। কিন্তু তাঁদের পছন্দ অনেক ক্ষেত্রেই অস্বীকার করা হয়েছে। যাঁদের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল তাঁরা অনেকেই দলীয় প্রার্থী না হতে পেরে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষোভ আওয়ামি লিগ, বিএনপি দু’দলেই। দুই দলই নিচু তলার বিক্ষোভ মেটাতে ব্যস্ত। শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, এটা মান অভিমানের সময় নয়। ২২ মার্চ ৭৩৮টি ইউনিয়নে ভোট। সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে। এটাই ইউনিয়নে প্রথম রাজনৈতিক নির্বাচন। এবারের প্রার্থী বাছাইয়ে কিছুটা অসঙ্গতি থাকলেও পরের বার সব ঠিক হয়ে যাবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের আগে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও খুশির স্রোত। তাঁরা অবাধে ভোট দেবেন। এর চেয়ে বড় অধিকার আর কী হতে পারে।