উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই লাল ফৌজের নৌসেনা দক্ষিণ চিন সাগরে মহড়া দিচ্ছে, কিন্তু সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছে বিতর্কিত জলভাগ। —ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায় নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক মহড়া ঘোষণা করল চিন। হাইনানের কাছে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এই মহড়া। তাই অঞ্চলে আপাতত তিন দিন অন্য কোনও দেশের জাহাজের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেজিং। দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের অধিকার কায়েম রাখার বার্তা দিতেই হঠাৎ মহড়া দেওয়ার তোড়জোড় চিনা নৌসেনার তরফে, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু মহড়ার জন্য যে এলাকা চিন বেছে নিয়েছে, তাতে সঙ্ঘাত এড়ানোর বার্তাই রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
হাইনান হল চিনের দ্বীপ প্রদেশ। মূল ভূখণ্ডের খুব কাছেই অবস্থিত এই দ্বীপ। দক্ষিণ চিন সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপের কাছেই তিন দিনের নৌ-মহড়া শুরু করছে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মহড়া চলবে। কিন্তু হাইনানের উপকূলের কাছে যে জলভাগে মহড়ার আয়োজন, সেই জলভাগ নিয়ে কিন্তু খুব একটা বিতর্ক নেই। প্যারাসেল আইল্যান্ডস এবং স্প্র্যাটলি আর্কিপেলাগো থেকে বেশ অনেকটা দূরেই আয়োজিত হচ্ছে তিন দিনের এই নৌ-মহড়া। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ঘোষণা হওয়ার আগে যে ভাবে প্যারাসেল এবং স্প্র্যাটলির উপকূলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছিল চিন, এ বারের মহড়ায় কিন্তু তারা আর সে পথে হাঁটছে না। দক্ষিণ চিন সাগরে মহড়া দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বিতর্কিত জলভাগ থেকে বেশ খানিকটা সরে গিয়েই সেই আয়োজন করা হচ্ছে।
ভিয়েতনামের কাছে প্যারাসেল আইল্যান্ডস, ফিলিপিন্সের কাছে স্প্র্যাটলি আর্কিপেলাগো এবং ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানের মাঝামাঝি স্কারবোরো শোলের অধিকার নিয়েই বিবাদ। নাইন ড্যাশ লাইন নামে একটি কল্পিত জলসীমান্ত রেখার মাধ্যমে চিন দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশ এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে। চিনের এই নাইন ড্যাশ লাইন ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই ও তাইওয়ানের উপকূল ঘেঁষে অবস্থান করছে। অর্থাৎ ওই দেশগুলির নিজস্ব জলসীমাকেও চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করছে।
আরও পড়ুন: পূর্ব লাদাখে বিপুল সেনা, ট্যাঙ্ক বাহিনীও, ভারতের তৎপরতায় অস্বস্তি চিনে
ফিলিপিন্সের দায়ের করা মামলার রায় দিতে গিয়ে দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল নাইন ড্যাশ লাইনের অস্তিত্বকে অস্বীকার তো করেইছে। প্যারাসেল, স্প্র্যাটলি এবং স্কারবোরোর উপরেও চিনের কোনও অধিকার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ঘোষিত হয়েছে ১২ জুলাই। রায় ঘোষণার দিন যত কাছে আসছিল, চিন ততই সুর চড়াচ্ছিল। প্যারাসেল এবং স্প্র্যাটলির কাছে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে, তা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মহড়া দেওয়া শুরু করেছিল। রায় ঘোষিত হওয়ার পরে বেজিং-এর হুঙ্কার আরও বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায়কে ‘বাতিল কাগজে দিস্তা’ ছাড়া চিন আর কিছুই মনে করছে না, জানায় বেজিং। চিনের এই আচরণকে বিশ্বের কোনও বড় শক্তিই সমর্থন জানায়নি। তা সত্ত্বেও চিন অবস্থানে অনড় থাকার বার্তা দিচ্ছিল। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষিণ চিন সাগরে নৌ-মহড়া দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে বেজিং। কিন্তু নৌ-মহড়ার জন্য যে অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে, তারা, তাতে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, চিন সুর নরম করতে শুরু করেছে। বিতর্ক সবচেয়ে তীব্র যে অঞ্চলকে নিয়ে, সেখানে গিয়ে শক্তি প্রদর্শন করা থেকে আপাতত বিরতই থাকছে বেজিং।