‘বেআইনি’ বলে নিন্দায় পাকিস্তান, ৩৭০ নিয়ে বাকি সব দেশের মুখে কুলুপ

পাক বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ‘বেআইনি’ কার্যকলাপের নিন্দা করেছেন পাক বিদেশসচিব সোহেল মাহমুদ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৪৯
Share:

ছবি: এএফপি।

৩৭০ ধারা খারিজ ও জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক বিভাজনের সিদ্ধান্তটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করার পরেই তার তীব্র নিন্দা করল পাকিস্তান। ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে ডেকে

Advertisement

পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) দিল পাক সরকার। পাক বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দিল, ভারতের ‘বেআইনি’ ও ‘একতরফা’ এই সিদ্ধান্তের মোকাবিলায় সম্ভাব্য সমস্ত পদক্ষেপ তারা করবে। দ্বারস্থ হবে রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চের। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আগামী মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভাতেও কাশ্মীর নিয়ে সুর চড়াবে পাকিস্তান।

কাশ্মীরের মানুষের আত্মপরিচয় নির্ধারণের ‘অবিচ্ছেদ্য অধিকারের’ প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক বিবৃতিতে পাক বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ‘জম্মু ও কাশ্মীর আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি বিতর্কিত অঞ্চল। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবেও তাকে ‘বিতর্কিত অঞ্চল’ বলা হয়েছে। ভারতের কোনও একতরফা পদক্ষেপ তাকে বদলাতে পারবে না।’

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পাক বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ‘বেআইনি’ কার্যকলাপের নিন্দা করেছেন পাক বিদেশসচিব সোহেল মাহমুদ। পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং মুসলিম দেশগুলির গোষ্ঠী ‘ওআইসি’-র পাশাপাশি পাকিস্তানের মিত্র দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে কাশ্মীর নিয়ে সরব হওয়ার আহ্বান জানাবেন তাঁরা। পাক সফরকারী মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছেও তোলা হবে কাশ্মীর প্রসঙ্গ। নেওয়া হবে আইনি পরামর্শ। একটি চ্যানেলে কুরেশি দাবি করেন, জম্মু-কাশ্মীরের মর্যাদায় বদল এনে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিজের অঙ্গীকার ভেঙেছে ভারত। এই পদক্ষেপের কোনও সাংবিধানিক যৌক্তিকতা নেই। ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী (অটলবিহারী) বাজপেয়ীও ওই এলাকাকে বিতর্কিত বলে মেনেছিলেন। মানুষের মতামত পাল্টাতে পারবে না ভারত। তারাই কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক বিষয় করে তুলল’’, বলেছেন কুরেশি। পাক মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজ়ারি বলেছেন, ‘‘অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত।’’

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কেরই আভাস মিলেছে। কূটনীতিকদের মতে, ট্রাম্পের এই মনোভাবের সুযোগেই সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে কাশ্মীর নিয়ে ঝাঁপাবে পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস আজ দুই দেশের নেতৃত্বকে সংযত হতে অনুরোধ করেছেন ঠিকই। কিন্তু আসন্ন অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে কাশ্মীরই সব চেয়ে বড় হয়ে উঠতে চলেছে।

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামিকাল পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন ডেকেছেন পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। দিল্লির সমালোচনায় সরব পিপিপি শীর্ষ নেতা বিলাবল ভুট্টো জারদারি থেকে পিএমএল(এন) শীর্ষ নেতা শাহবাজ শরিফ। শাহবাজের প্রস্তাব, নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকার দাবির পাশাপাশি চিন, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরবের মতো ‘মিত্র’ দেশের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করুক পাক সরকার।

তবে সুর চড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন পিএমএল(এন) নেত্রী মারিয়াম নওয়াজ। টুইটারে নওয়াজ-কন্যা লেখেন, ‘কী ঘটতে চলেছে, মিস্টার (ইমরান) খান হয় তা বুঝতে পারেননি, অথবা গোটাটাই জানতেন। সত্যিটা বলুন।’ এর উত্তরে পাকিস্তানেরই এক নেটিজ়েন লিখেছেন, ‘দেশের আজকের কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য আপনার বাবাই দায়ী।’ আর এক পাকিস্তানির টুইট, ‘১৯৪৮-এর অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে সিয়াচেন, কার্গিল, মুম্বই, পাঠানকোট, পুলওয়ামা— এর জন্যই আজ পাকিস্তানের পাশে কেউ নেই।’ পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে টায়ার জ্বালিয়ে, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থার খবর। যদিও সেই মুজফ্ফরাবাদ থেকে ফিরেই এক পাক সাংবাদিকের টুইট, ‘দুঃখ আর বিস্ময়ের পাশাপাশি এখানকার লোকজনের আরও একটা ধারণা আছে। তা হল, কাশ্মীর নিয়ে এই সব কিছুই ঘটছে পাক সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন