Chuck Feeney

বাস ভাড়াবাড়িতে, নেই গাড়ি, সব সম্পত্তি দান করে এই ধনকুবের ‘বিশ্বপ্রেমের জেমস বন্ড’

তিনি মনে করেন অন্যের উপকারে ব্যবহৃত হওয়ার মধ্যেই কোনও সম্পত্তির সার্থকতা লুকিয়ে আছে। সঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকলে সেই সম্পত্তির কোনও মূল্য ফিনির কাছে নেই।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:১৩
Share:
০১ ১৫

কয়েক বছর আগে অবধি যাতায়াত করতেন ট্রেনের সাধারণ কামরায়। সঙ্গে জিনিসপত্র থাকত প্লাস্টিকের ব্যাগে। অথচ তিনি ধনকুবের। গত আটত্রিশ বছর ধরে তিনি দান করেছেন তিল তিল করে জমানো তাঁর সম্পত্তি। দান করার ক্ষেত্রে আইরিশ-মার্কিন বংশোদ্ভূত চার্লস ফ্রান্সিস ফিনি-কে বলা হয় ‘জেমস বন্ড’।

০২ ১৫

নিউজার্সির এলিজাবেথ শহরে ফিনির জন্ম ১৯৩১ সালের ২৩ এপ্রিল। তাঁর পরিবারের আদি বাস ছিল উত্তর আয়ারল্য়ান্ডের ফারমানাঘ কাউন্টিতে। এলিজাবেথ শহরের সেন্ট ম্যারি অব দ্য অ্যাসাম্পশন স্কুলে তাঁর পড়াশোনা। দানের মধ্যে যে আনন্দ, তা তিনি শিখেছিলেন এই স্কুল থেকেই। পরে বহু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ফিনি।

Advertisement
০৩ ১৫

স্কুলের পরে ফিনি পড়াশোনা করেন হোটেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে। ১৯৫০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্য়ে যুদ্ধে তিনি ছিলেন মার্কিন রেডিয়ো অপারেটর। ব্যবসায় হাতেখড়িও সেই সময়েই। ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন বন্দরে মার্কিন নৌ-অফিসারদের কাছে তিনি ডিউটি ফ্রি মদ বিক্রি করতেন।

০৪ ১৫

পরে ব্যবসাতেই মন দিলেন ফিনি। বন্ধু রবার্ট ওয়ারেন মিলারের সঙ্গে মিলে ষাটের দশকে তৈরি করলেন ডিউটি ফ্রি শপার্স গ্রুপ। সময়ের সঙ্গে এই সংস্থা তথা ফিনির ব্য়বসা ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবী জুড়ে।

০৫ ১৫

আশির দশকের শুরুতে গোপনে জনসেবা এবং দানপর্ব শুরু করলেন ফিনি। ১৯৮২ তে জন্ম নিল তাঁর সংস্থা ‘দ্য আটলান্টিক ফিলানথ্রপিস’। দু’ বছর পরে ডিউটি ফ্রি শপার্স গ্রুপে তাঁর নিজের সব শেয়ার তিনি দান করে দিলেন এই সংস্থায়। যার আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলার।

০৬ ১৫

তাঁর এই দানপর্ব ছিল সম্পূর্ণ গোপন। এমনকি, তাঁর ব্য়বসায়িক অ‌শীদাররা অবধি জানতেন না। তিনি আর খাতায়কলমে নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থার কর্ণধার নন। এরপর বছরের পর বছর একদিকে ফিনি উপার্জন করেছেন, অন্যদিকে দান করেছেন। তবে তাঁর দানপর্ব কার্যত গোপনই থাকত।

০৭ ১৫

ফিনির দানের সিংহভাগ জুড়ে ছিল শিক্ষাক্ষেত্র। নিজের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই। তাঁর আর্থিক আনুকূল্য পেয়েছে বিভিন্ন আইরিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। ভিয়েতনামের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নেও তিনি দান করেছেন।

০৮ ১৫

বর্তমানে তাঁর দান সংক্রান্ত সংস্থা আটলান্টিসের অফিস আছে পৃথিবীর ১০ শহরে। সংস্থার কর্মীসংখ্যা ৩০০। সম্প্রতি সংস্থার মাধ্যমে নিজের ৮০০ কোটি ডলারের সম্পত্তি পুরোটাই দান করে দিয়েছেন।

০৯ ১৫

অতীতে দীর্ঘদিন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তির স্থান দখল করে থাকা বিল গেটস তাঁর গুণমুগ্ধ। আর এক ধনকুবের ওয়ারেন বাফে তো ফিনিকে নিজের জীবনের আদর্শ বলে মনে করেন।

১০ ১৫

গেটস এবং বাফে-কে এক বার চিঠিতে ফিনি লিখেছিলেন, দানের মতো আনন্দ তিনি আর কিছুতেই খুঁজে পান না। তিনি মনে করেন অন্যের উপকারে ব্যবহৃত হওয়ার মধ্যেই কোনও সম্পত্তির সার্থকতা লুকিয়ে আছে। সঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকলে সেই সম্পত্তির কোনও মূল্য ফিনির কাছে নেই।

১১ ১৫

ব্যক্তিগত জীবনে কৃচ্ছ্রসাধন করতে ভালবাসেন ফিনি। তাঁর নিজস্ব গাড়ি নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী হেলগাকে নিয়ে থাকেন ভাড়াবাড়িতে। হেলগা ছিলেন তাঁর সেক্রেটারি। প্রথম স্ত্রী ড্য়ানিয়েলিকে ডিভোর্স করার পরে ফিনি বিয়ে করেন হেলগাকে।

১২ ১৫

ফিনি এবং ড্যানিয়েলির পাঁচ সন্তান। চার মেয়ে এবং এক ছেলে। সম্প্রতি নিজের ভাড়াবাড়িতে বসে ভগ্নস্বাস্থ্য‌ ফিনি জানিয়েছেন তাঁর সংস্থা ‘দ্য আটলান্টিক ফিলানথ্রপিস’ এখন অর্থশূন্য। কারণ সংস্থার শেষ কপর্দক অবধি তিনি দান করে দিয়েছেন।

১৩ ১৫

ফিনি চেয়েছিলেন জীবদ্দশাতেই সব অর্থ দান করে দিতে। সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন তিনি। তাঁর সংস্থা আটলান্টিকেরও প্রয়োজন কার্যত ফুরিয়েছে। তাঁর স্বপ্নের উড়ানে যাঁরা পাশে ছিলেন, সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফিনি।

১৪ ১৫

২০১২ সালে ফোর্বস পত্রিকাকে ফিনি বলেছিলেন, অবসরজীবনে নিজের এবং পরিবারের জন্য মাত্র কুড়ি লক্ষ ডলার রেখে বাকি সব তিনি দান করে দিতে চান। সেই কথা রেখেছেন ৮৯ বছর বয়সি এই উদ্যোগপতি। এই পরিমাণ অর্থ নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান এই ধনকুবের।

১৫ ১৫

মার্কিন পত্রিকা বিশ্বের ধনকুবেরদের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ দাতাদের নামের তালিকাও প্রকাশ করে। দুই তালিকাতেই প্রথম সারিতে স্বমহিমায় বিরাজ করেছেন ফিনি। নিজের ধনসম্পত্তি জনকল্যাণে ব্যবহার করা-ই তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ জীবনদর্শন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement