গত জুলাই মাসে ব্রাজ়িলে আয়োজিত ‘ব্রিক্স’ সম্মেলন। — ফাইল চিত্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কী প্রভাব পড়তে পারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে, তা নিয়ে এ বার আলোচনায় বসছে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ‘ব্রিক্স’-এর সদস্য দেশগুলি। আগামী সোমবার ভার্চুয়ালি এই বৈঠকের আয়োজন করছেন ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। ব্রাজ়িলের সরকারি সূত্র মারফত এমনটাই জানা গিয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার ওই দেশের দুই সরকারি আধিকারিক সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’কে জানান, মার্কিন শুল্ককোপ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক নীতির পক্ষে সদস্য দেশগুলিকে এককাট্টা করতে চান লুলা।
ভারতের মতো ব্রাজ়িলের উপরেও ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এখনও পর্যন্ত যে ট্রাম্প-ঘোষিত শুল্কের সবচেয়ে বড় ঘা পড়েছে এই দুই দেশের উপরেই। দুই দেশই ‘ব্রিক্স’-এর সদস্য। ভারতের উপর ট্রাম্প শুল্ক চাপিয়েছেন রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য। অন্য দিকে ব্রাজ়িলের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ, তারা সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসেনারোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ বিচারপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তা নিয়ে ব্রাজ়িলকে সাম্প্রতিক অতীতে বার বার নিশানা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ঠিক যেমন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে ভারতকে নিশানা করেছেন। ব্রাজ়িলের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপানোর নেপথ্যেও যে এটিই কারণ, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
গত জুলাই মাসে ব্রাজ়িলের রিও ডি জেনেইরো শহরে ‘ব্রিক্স’ সম্মেলন হয়েছে। শুল্কসংঘাতের আবহে ওই সময়ে ‘ব্রিক্স’কে ‘আমেরিকাবিরোধী’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর আমেরিকাবিরোধী নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের উপর বাড়তি শুল্ক চাপানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক এই জোটে ভারত ও ব্রাজ়িলের পাশাপাশি রয়েছে চিন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়া গত বছর ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ইথিয়োপিয়া, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ভারত এবং ব্রাজ়িলের উপর ট্রাম্প যে হারে শুল্ক চাপিয়েছেন ‘ব্রিক্স’-এর অন্য সদস্যদেশগুলির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তেমন নয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চিনের সঙ্গে আমেরিকা এখনও শুল্ক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়াকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিলেও তাদের উপর কোনও শুল্ককোপ এখনও ঘোষণা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার উপর তিনি চাপিয়েছেন ৩০ শতাংশ শুল্ক।
ব্রাজ়িলের সরকারি আধিকারিকদের মতে, ভিন্ন ভিন্ন দেশের উপর ভিন্ন ভিন্ন শুল্কহার থাকার ফলে ‘ব্রিক্স’-এর ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে কোনও যৌথ বিবৃতি আসা কঠিন। তা ছাড়া এই ভার্চুয়াল বৈঠককে ‘আমেরিকাবিরোধী’ কোনও সম্মেলন হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন না লুলা। কারণ, আগামী মঙ্গলবার থেকে সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে ব্রাজ়িলে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে ট্রাম্প তাদের উপর আরও বেশি করে আক্রমণ শানাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে ব্রাজ়িল। ইতিমধ্যে ব্রাজ়িলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ভিসা বাতিল করেছে আমেরিকা। বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা শোনা এক বিচারপতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। এ অবস্থায় ট্রাম্পকে আর চটাতে চাইছে না ব্রাজ়িল।
বস্তুত, গত জুলাই মাসে ‘ব্রিক্স’ সম্মেলনের সময়ে অনেকেই মনে করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ‘ব্রিক্স’-এর জন্য ঢাল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার চিনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও) সম্মেলনে গিয়ে মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জুলাই মাসে যে কূটনৈতিক সমীকরণ ছিল, তা এখন অনেকটাই বদলেছে। এ অবস্থায় ‘ব্রিক্স’-এর ভার্চুয়াল বৈঠকে কী কী বিষয় উঠে আসে, তা নিয়ে কৌতূহল দানা বাঁধতে শুরু করেছে।