ব্রেক্সিটের জেরে সঙ্কটে ভারত-চিন-সহ গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই

সব হিসেবেই উল্টেপাল্টে দিয়েছে ব্রেক্সিট। গণভোটের ফল বেরনোর দিনই ধস নেমেছিল শেয়ারবাজারে। ভারত, হংকং, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া— দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনও বাজারই এই ধস থেকে থেকে বাঁচতে পারেনি।

Advertisement

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ১৯:৪২
Share:

সব হিসেবেই উল্টেপাল্টে দিয়েছে ব্রেক্সিট। গণভোটের ফল বেরনোর দিনই ধস নেমেছিল শেয়ারবাজারে। ভারত, হংকং, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া— দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনও বাজারই এই ধস থেকে থেকে বাঁচতে পারেনি।

Advertisement

গণভোটের পরে ইইউ-র থেকে ব্রিটেনকে বেরিয়ে আসতে হবে। যদিও ব্রেক্সিট বিরোধী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ বা ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ডের ভেটোর প্রস্তাব রয়েছে। তার পরেও আপাতত ব্রেক্সিট হচ্ছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু কী ভাবে ব্রেক্সিট হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গিয়েছে। ইইউ ব্রিটেনকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে বললেও ব্রিটেন ধীরে চলো নীতি নিয়ে চলেছে। আর এতে অনিশ্চয়তার মেঘ আরও গাঢ় হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। বাদ যায়নি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াও।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি চিন। ব্রেক্সিটের পরে আশঙ্কায় ভুগছে চিনও। চিনের কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা শুধু স্বল্প মেয়াদে শেয়ারবাজারের পতনই নয়, ব্রেক্সিটের ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। তাঁদের আশঙ্কা আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে সঙ্কটের স্বরূপটি প্রকট হবে। ব্রিটেনে চিনের প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। গত অক্টোবর মাসেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্রিটেন সফরে গিয়েছিলেন। সেই সফরে দু’দেশের মধ্যে নানা অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যার মূল্য ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। ইইউ ছেড়ে ব্রিটেন বেরিয়ে এলে এই চুক্তি ধাক্কা খাবে। দীর্ঘ দিন ধরেই লন্ডন বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম কেন্দ্র। ব্রেক্সিটের পরে লন্ডন থেকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালানো শক্ত। এটাও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।

Advertisement

এমনিতেই ইউরোপের অর্থনীতির হাল খারাপ হওয়ায় একনাগাড়ে মার খাচ্ছে রফতানি। চিন, ভারত, দক্ষিণঁ কোরিয়ার মতো দেশ রফতানির উপরে নির্ভরশীল। ব্রেক্সিট উত্তর পর্বে রফতানির অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বে এখন তেলের দাম যথেষ্ট কম। চিন, ভারতের মতো দেশ প্রচুর পরিমানে তেল আমদানি করে। কিন্তু এর উপরে যদি তেলের দাম বাড়তে থাকে, তবে বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারে টান পড়তে পারে। চিন, ভারতের বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলেও অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পারবে না। এর পাশাপাশি ডামাডোলের বাজারে বিদেশ থেকে লগ্নি আসা কমতে পারে। চিন, ভারতের মতো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বিনিয়োগ কমলে অর্থনীতি দুর্বল হবে। একই সঙ্গে বাড়তে পারে ডলারের দাম। এতে বিপাকে পড়বে আমদানি-নির্ভর শিল্পগুলি।

আরও পড়ুন: আবার গণভোট চেয়ে ব্রিটেনে সই ৩০ লক্ষের

ব্রেক্সিটের পরে ব্রিটেনে, বিদেশিদের চাকরি পাওয়া শক্ত হবে। এশিয়ার এই অঞ্চল থেকে চাকরির সন্ধানে যাঁরা ব্রিটেনে পাড়ি দেন তাঁদের সামনে কঠিন সময় আসছে। এতে দেশগুলির চাকরির বাজারে চাপ বাড়বে।

কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির আশঙ্কা আরও গভীরে। ব্রিটেনের পথে যদিও আরও কয়েকটি দেশ ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে তবে পরিস্থিতি চূড়ান্ত টালমাটাল হয়ে পড়বে। ফলে আশঙ্কার দোলাচলে প্রহর গুনছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন