Dexamethasone

করোনা-যুদ্ধে ‘জীবনদায়ী’ স্টেরয়েড, অক্সফোর্ড বাজি ধরল ‘ডেক্সামেথাসোন’-ও

রিকভারি-ট্রায়ালে ‘অভূতপূর্ব’ সাফল্যের দাবি করে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিশেষজ্ঞ আজ ‘জীবনদায়ী’ ওষুধ হিসেবে বাজি ধরলেন স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড ‘ডেক্সামেথাসোন’-এর উপরে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

অভিবাদন: পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকলেও মুখে নেই মাস্ক। ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ার রয়্যাল হাসপাতাল পরিদর্শনে ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস। সঙ্গে হাসপাতালের এক আধিকারিক ও এক চিকিৎসক। মঙ্গলবার। রয়টার্স

করোনা-যুদ্ধে ফের আশার আলো। জুড়ল হতাশাও। আশা বাজারচলতি সস্তা ওষুধে, আর হতাশা সম্ভাব্য প্রতিষেধকে।

Advertisement

রিকভারি-ট্রায়ালে ‘অভূতপূর্ব’ সাফল্যের দাবি করে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিশেষজ্ঞ আজ ‘জীবনদায়ী’ ওষুধ হিসেবে বাজি ধরলেন স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড ‘ডেক্সামেথাসোন’-এর উপরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকেই ‘গেমচেঞ্জার’ বলে দাবি করছেন, অক্সফোর্ড বলল, জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে ডেক্সামেথাসোনই বড় ভরসা হতে চলেছে। অক্সিজেন-সাপোর্টে থাকা করোনা-আক্রান্ত তো বটেই, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীরও জীবনের ঝুঁকি কমবে এক-তৃতীয়াংশ! অসুখ তেমন গুরুতর না-হলে অবশ্য এই ওষুধ প্রয়োগে লাভ নেই। এবং আগামী দিনে আরও ভাল রোগ-নির্ণয় পদ্ধতি এবং প্রতিষেধকই যে করোনা-মুক্তি পথ, তা-ও জানালেন তাঁরা।

অন্য দিকে, আজ আবার ব্রিটেন থেকেই অন্য রকম আশঙ্কার কথা শোনা গেল সম্ভাব্য প্রতিষেধক নিয়ে। করোনার প্রতিষেধক তৈরি হয়ে গেলে তা যে শুরু থেকেই সংক্রমণ রুখে দেবে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞদের একাং‌শ। তাঁদের মতে, গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীকে হয়তো বাঁচানো যাবে, কিন্তু প্রথম দফার প্রতিষেধকে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।

Advertisement

করোনা-ত্রাসের আবহেই ছন্দে ফেরার চেষ্টায় মরিয়া বিশ্ব। সেই সঙ্গে হন্যে হয়ে চলছে প্রতিষেধকের খোঁজ। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরে সম্ভাব্য একটি প্রতিষেধক নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্রের খবর, আজ থেকে আর একটি সম্ভাব্য প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু করেছে লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ। সেখানে গবেষক দলটির নেতা রবিন শ্যাটক জানালেন, ‘‘প্রথম ধাপে যে প্রতিষেধক আসছে, তাতে সংক্রমণ ঠেকানো না-গেলেও রোগমুক্তি ঘটবে। আপাতত সেটাই আমাদের বড় পাওনা বলে ধরে এগোতে হবে।’’

আরও পড়ুন: বেজিংয়ে প্রতিদিন পরীক্ষা ৯০ হাজারের

ব্রিটেনের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা, চিন, জার্মানির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখনকার মতো চূড়ান্ত প্রতিষেধক তৈরির আগে অক্সফোর্ডের শংসাপত্র পাওয়া ষাট বছরের প্রাচীন ডেক্সামেথাসোনে ভরসা করতে চাইছেন অনেকেই। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক আজ এই ওষুধের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘বিশ্বের প্রথম করোনা-ওষুধের সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ঘোষণা করতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত।’’ তবে রাত পর্যন্ত এই ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ব্রিটেন আজ রাত থেকেই এই ওষুধ রফতানি নিষিদ্ধ করেছে।

অক্সফোর্ডের দাবি, গোড়া থেকেই ডেক্সামেথাসোন ব্যবহার করা গেলে শুধু ব্রিটেনেই অন্তত ৫ হাজার মৃত্যু কম হত। তাঁদের দাবি, বাজারচলতি এই ওষুধ যে-হেতু খুব কম দামে মেলে, তাই দরিদ্র দেশগুলিতেও তা কার্যকরী হতে পারে। গবেষকদের দাবি, তাঁরা এই ওষুধের পরীক্ষা চালিয়েছেন ২,১০৪ জন গুরুতর করোনা-আক্রান্তের উপরে। তাঁদের টানা ১০ দিন ৬ মিলিগ্রাম করে দেওয়া হয়েছিল ডেক্সামেথাসোন। একই সঙ্গে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল ৪,৩২১ জনকে। দেখা গিয়েছে, ডেক্সামেথাসোন দিয়ে অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা অন্তত এক পঞ্চমাংশ রোগীর জীবনের ঝুঁকি কমানো গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ৪৫ বছর আগে শেষ বার গুলি চলেছিল ভারত-চিনের মধ্যে, সাক্ষী অরুণাচলের মাগো

অক্সিজেন-সাপোর্ট কিংবা ভেন্টিলেশনে থাকা গুরুতর করোনা-আক্রান্তের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে কিংবা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া ঠেকাতে মিথাইলপ্রেডনিসোলোন জাতীয় স্বল্পমাত্রার স্টেরয়েড-চিকিৎসা অবশ্য ভারতেও চলছে। পশ্চিমবঙ্গের করোনা চিকিৎসা প্রোটোকলেও ৩-৫ দিন এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের কথা বলা আছে। এখন অক্সফোর্ড যে-হেতু রিকভারি-ট্রায়ালের সাফল্য দাবি করছে, তাই বিশ্বের নজর এখন ডেক্সামেথাসোনের দিকেই। স্বাধীন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওয়েলকাম হেল্‌থ ফাউন্ডেশন’-এর নিক ক্যামাক-ও ‘জীবনদায়ী’ হিসেবে ডেক্সামেথাসোনের ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন, ‘‘স্বল্প মাত্রাতেই কাজ করবে এই ওষুধ। ডেক্সামেথাসোনের দামও সকলের আয়ত্তের মধ্যে। খুব সহজে তা তৈরি করাও যায়। আশা জাগছে বই কি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন