Coronavirus

যে-কোনও দিন বিপদের লাল স্তরে পৌঁছে যাব

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

অ্যান্ডোভার (আমেরিকা) শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:২১
Share:

সুপারমার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়ার লাইন।—ছবি এপি।

ম্যাসাচুসেটস প্রদেশের অ্যান্ডোভার নামের একটি ছোট শহরে থাকি। কাজ করি এখানকারই একটি স্কুলে। একটি শিক্ষা-বিষয়ক ওয়েব-সেমিনারে শিখলাম একটি মডেল ব্যবহার করে স্কুলছুট ছেলেমেয়েদের কী ভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং তাদের সাহায্য করা যায়। কেমন সেই মডেল?

Advertisement

মডেলটির আকার একটি পিরামিডের মতো। পিরামিডটা আড়াআড়ি ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা, তিনটে স্তর। নীচের স্তরটা বিস্তৃত। সেখানে আছে সব থেকে বেশি ছেলেমেয়ে, যাদের কাছে স্কুল পৌঁছতে পারছে। যেমন আমার ছেলে। তার স্কুল থেকে ই-মেলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। প্রত্যেক সপ্তাহে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, ছেলেমেয়েরা কেমন আছে জানার জন্য। কী ভাবে তারা পড়াশোনা করছে, স্কুল ও অভিভাবকেরা কী ভাবে তাদের সাহায্য করতে পারে, এই সব নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের নিয়মিত ই-মেলের আদানপ্রদান হচ্ছে।

পিরামিডের মাঝের স্তরটা আর একটু ছোট। তার মধ্যে রয়েছে আর একটু কমসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ও তাদের পরিবার। তার মধ্যে থাকতে পারে মানসিক ভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছাত্রছাত্রীরা। যাদের বাড়িতে এই মুহূর্তে কেউ হয় তো করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু যাঁর প্রাণ যাওয়ার ভয় নেই। অথবা সে রকম কোনও পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাদের এই পরিস্থিতিতে কিছুটা আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এ সবের নেতিবাচক অভিঘাত পড়েছে বাড়ির বাচ্চার উপরেও।

Advertisement

আরও পড়ুন: চার মাস পর আজ প্রথম করোনা রোগী শূন্য উহান

আর পিরামিডের উপরের যে সবচেয়ে ছোট্ট অংশটি, সেখানে আছে সেই সব ছাত্রছাত্রী, যাদের পরিবারে মৃত্যু এসেছে, অথবা চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে, অভিভাবকের চাকরি চলে গিয়েছে, যাদের টেবিলে খাবার প্রায় পৌঁছচ্ছে না। এ দেশে এই ধরনের বাচ্চার সংখ্যা এখনও অনেক কম, কিন্তু আশঙ্কা থাকছেই যে, উপরের ছোট্ট অংশটাই আস্তে আস্তে ঢেকে ফেলেবে এই পিরামিডকে, এই দেশের মানচিত্রকে, এমনকি এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের মস্তিষ্ককেও।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের দাওয়াই নিয়ে সতর্কবার্তা মার্কিন নিয়ন্ত্রকের

খবরে দেখছি, সাত বছরের মেয়ের দিশাহারা মুখ। মা-দিদির পাশে বসে রয়েছে, চুয়াল্লিশ বছরের বাবা হাসপাতালে গেলেন, আর ফিরলেন না। ‘সিঙ্গল’ মায়ের এগারো বছরের মেয়ে একা বসে আছে হাসপাতালের টেস্টিং রুমে, মা মারা গিয়েছেন, মেয়েও কোভিড পজ়িটিভ। কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হবে, সে জানে না। এই ধরনের ভয়ঙ্কর অসহায় ছেলেমেয়েদের নিয়েই ভরে আছে এই পিরামিডের চূড়া।

আর তার সঙ্গে আছে চূড়ান্ত মানসিক অবসাদ ও নিগ্রহের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কোনও শিশু, যাকে স্কুলের সাত ঘণ্টার রুটিনটাই ‘লাইফ সাপোর্টের’ মতো ভাসিয়ে রাখত। সে এখন প্রায়ই তার শিক্ষককে বলছে, বাড়িতে থাকতে সে এত ভয় পাচ্ছে যে, বেঁচে থাকার কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না। যা শুনে আতঙ্কিত হচ্ছেন শিক্ষকও। এই নতুন অতিমারির তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে আগে থেকে থাকা নানা অসুখ। চাপা পড়ে যাচ্ছে, উধাও তো হয়ে যাচ্ছে না!

এই মডেলের তিনটে স্তরের দিকে তাকিয়ে আছি। এদের রং সাদা, হলুদ আর লাল। বিপদের, আশঙ্কার উপরের স্তর লাল। দেখছি আর ভাবছি, যে কোনও সময়ে আমরা চলে যেতে পারি ওই স্তরে। সেই ভয় মাথায় নিয়েই কাটছে দিন। সব চলছে— অনলাইনে কাজ-স্কুল-কলেজ, বাড়িতে রান্না ও অন্যান্য কাজ, জ়ুমে ভিডিয়ো চ্যাট আর আড্ডা, ফেসবুকে গানের লাইভ, নেটফ্লিক্স-আমাজ়নে ওয়েব সিরিজ়। তার মধ্যেই ১৫ মিনিট অন্তর খবরের আপডেট শোনা আর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে আতঙ্কের পিচ্ছিল পথে নেমে যাওয়া। আবার সকাল হলে টেনে-হিঁচড়ে নিজেকে তোলার চেষ্টা। আবার শুরু আর একটা দিন…।

(লেখক স্পেশ্যাল এডুকেটর)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন