Coronavirus

শেনইয়াংয়ে ‘বন্দি’ সুন্দরবনের সৈকত

২০১৭ সালে ডাক্তারি পড়ার জন্য চিনের শেনইয়াং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন সৈকত। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছেলেকে চিন দেশে পড়তে যেতে দিতে চাননি সৈকতের মা সুমিত্রা।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

গোসাবা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩৫
Share:

হোস্টেলের ঘরে সৈকত

উহান থেকে দূরত্ব দেড় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। কিন্তু করোনাত্রাসে গোটা চিনই প্রায় খোলসে ঢুকে পড়েছিল। আরও ভাল করে বলতে গেলে নিরাপত্তার জন্য সব প্রদেশের বাসিন্দাদেরই গৃহবন্দি হওয়ার নির্দেশ জারি করেছিল সে দেশের সরকার। তার ফলেই কার্যত চিনের শেনইয়াং প্রদেশে বন্দিদশায় কাটছে সুন্দরবনের সৈকত মণ্ডলের।

Advertisement

৭৬ দিন পরে উহানে লকডাউন উঠেছে মাত্র ক’দিন আগে। ফলে ধীরে ধীরে নিয়ম শিথিল হচ্ছে শেনইয়াংয়েও। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজেই ডাক্তারি পড়েন গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন কোস্টাল থানার কুমিরমারি গ্রামের সৈকত। শুধু তিনি নন, এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক ছাত্রছাত্রী সেখানে প্রায় দেড় মাস বন্দি অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন।

সেই তালিকায় এ রাজ্যেরও কয়েকজন রয়েছেন। তবে ক্লাস বন্ধ হয়নি। হস্টেল থেকেই অনলাইন ক্লাস করেছেন তাঁরা।

Advertisement

২০১৭ সালে ডাক্তারি পড়ার জন্য চিনের শেনইয়াং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন সৈকত। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছেলেকে চিন দেশে পড়তে যেতে দিতে চাননি সৈকতের মা সুমিত্রা। পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক সৈকতের বাবা নিখিলেশ বরাবরই চেয়েছিলেন ছেলে পাশ করা ডাক্তার হোক। তাই অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ছেলেকে ডাক্তারি পড়তে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: সুইৎজারল্যান্ডের পর্বতশৃঙ্গ সাজল ভারতের পতাকায়

উহানে ছড়িয়ে পড়ার পরে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ায় গোটা চিনেই। সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয় শেনইয়াং মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষও। কার্যত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। হস্টেলের ঘরেই বন্দি করে রাখা হয় পড়ুয়াদের। প্রত্যেক পড়ুয়াকে থার্মোমিটার-সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়। নির্দেশ ছিল নিয়মিত শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।

প্রায় দেড় মাস এই অবস্থা চলার পরে গত কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে শুক্রবার টেলিফোনে জানান সৈকত। তিনি বলেন, “ধীরে ধীরে এখানে সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। বাজার, শপিংমল খুলতে শুরু করেছে। আমাদেরও অল্পবিস্তর বাইরে বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি না হলেও এখন পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক।” সৈকত আরও জানান, হস্টেল থেকেই অনলাইনে ক্লাস করছেন তাঁরা। ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিনের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হয়েছেন সৈকতের বাবা-মা। নিখিলেশ বলেন, “খুব চিন্তায় ছিলাম, বিদেশে এই পরিস্থিতিতে কোথায় কী করবে ছেলেটা, ভেবে শান্তি পাচ্ছিলাম না। পরিস্থিতি যে কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে, এটাই স্বস্তির।” সুমিত্রা বলেন, “এখানেও লকডাউন চলছে ঠিকই। কিন্তু আমরা নিজের বাড়িতে পরিবারের সকলের মধ্যে আছি। বিপদে-আপদে সবাই সবার পাশে থাকতে পারছি। ও ওখানে সম্পূর্ণ একা। সেই কারণেই ওর জন্য চিন্তা হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: ‘এ সময় মৃতের সংখ্যা গোনাই তো একটা চ্যালেঞ্জ’, চিনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল হু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন