হড়পা বানে বিপর্যস্ত আমেরিকার টেক্সাস। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কেউ সন্তানের দেহ আগলে কাঁদছেন, আবার কেউ শোকে পাথর! কেউ কেউ আবার নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এ দিক-ওদিক!
জলের তলায় আমেরিকার টেক্সাস! গুয়াদালুপে নদীতে আসা হড়পা বান তছনছ করে দিয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে ২৩ জন পড়ুয়া! কয়েক ঘণ্টা কেটে গিয়েছে, এখনও তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। চিন্তায় নিখোঁজ শিশুদের পরিবার। শুধু তা-ই নয়, ঘণ্টা খানেকের হড়পা বানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শুধু হাহাকারের ছবি! কেউ ভিটেমাটি হারা, কেউ আবার সন্তানের খোঁজে দিশাহারা।
টেক্সাসের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গুয়াদালুপে নদীতে আচমকা হড়পা বান আসে। টানা বর্ষণের জেরেই নদীর জল বিপদসীমা ছাপিয়ে যায়। মাত্র ৪৫ মিনিটে গুয়াদালুপে নদীর জলস্তর ২৬ ফুট (৮ মিটার) বৃদ্ধি পায়। তার ফলে ভেসে যায় নদীর কূলবর্তী এলাকা। ওই নদীর তিরেই সপ্তাহান্তে গ্রীষ্মকালীন (সামার) ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিল একটি স্কুলের ছাত্রীরা। জলের তোড়ে ভেসে যায় তারা।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। শুধু স্থলপথ বা নদীপথে নয়, আকাশপথেও নিখোঁজ পড়ুয়াদের খোঁজ শুরু করেছে টেক্সাস প্রশাসন। ড্রোন উড়িয়ে নিখোঁজদের সন্ধান চালানো হচ্ছে। তল্লাশি চালিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৪ জনের দেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই পড়ুয়া।
হড়পা বানের খবর পাওয়ামাত্র ওই গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে যাওয়া পড়ুয়াদের পরিবারের লোকেরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। সকলের চোখেমুখেই আতঙ্কের ছাপ। আদৌও তাঁদের সন্তানেরা বেঁচে আছেন কি না, তা জানা নেই। শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালগুলিতেও স্বজনহারাদের কান্না।
ভারী বৃষ্টি চলছে কয়েক দিন ধরেই। কিন্তু গুয়াদালুপে নদীতে হঠাৎ করে জলের স্তর এ ভাবে বেড়ে যাবে, তা বুঝতেও পারেননি স্থানীয় আবহাওয়াবিদেরাও। কেরভিলের সিটি ম্যানেজার ডাল্টন রাইস জানান, ভোর হওয়ার আগেই নদীতে বান আসে। আচমকা পরিস্থিতি পাল্টে যায়, তাই পূর্বাভাস দেওয়ারও সুযোগ হয়নি! তাঁর কথায়, ‘‘দু’ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়।’’
ওই ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা ক্লোই ক্রেন জানান, তাঁর দায়িত্বে ছিল ১৫ জন ছাত্রী। তবে তারা কেউ বেঁচে নেই। তাদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা হবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি বলে জানান ক্রেন। সমাজমাধ্যমের পাতা ভরে চলছে নিখোঁজ পড়ুয়াদের জন্য খোঁজখবর। টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক জানিয়েছেন, ওই পড়ুয়ারা হয়তো হারিয়ে যায়নি। তারা প্রাণ বাঁচাতে গাছের উপর আশ্রয় নিয়েছে বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
ইতিমধ্যেই উদ্ধার অভিযানে নামানো হয়েছে ৫০০ জনকে। ব্যবহার করা হচ্ছে ১৪টি হেলিকপ্টার। তবে দফায় দফায় ভারী বৃষ্টির জন্য মাঝেমধ্যেই ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। আরও হড়পা বান আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নদী তীরবর্তী জায়গাগুলোয় না-যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে টেক্সাস প্রশাসন।