Stray Dogs

রয়েসয়ে মারে আমেরিকা, পাক মুলুকে মারে ‘নির্বিচারে’! কোন দেশ কী ভাবে পথকুকুর সামলায়

নেদারল্যান্ডসে দীর্ঘ দিন আগে থেকেই পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ শুরু হয়। শুরুর দিকে তারা কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পোষ্যপিছু করের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৪৬
Share:

পথকুকুর। —ফাইল চিত্র।

রাজধানী দিল্লির লোকালয় থেকে পথকুকুরদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই নির্দেশ ঘিরে দেশ জুড়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। বিতর্কের আবহে পথকুকুর সংক্রান্ত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মামলা এখনও বিচারাধীন। তবে শুধু ভারতেই নয়, পথকুকুর সংক্রান্ত সমস্যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই রয়েছে। তা নিয়ন্ত্রণের জন্য এক এক দেশে এক এক ধরনের ব্যবস্থাও রয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে তা সফল হতে দেখা গিয়েছে। আবার কোনও দেশ এখনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ খুঁজে যাচ্ছে।

Advertisement

আমেরিকার বড় শহরগুলিতে সাধারণত পথকুকুর দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু এলাকায় এখনও পথকুকুর সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। পথকুকুরদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আমেরিকায় বিভিন্ন ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানে পথকুকুরদের উদ্ধার করে নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়। এখান থেকে সারমেয়দের দত্তক নিয়ে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন আমেরিকাবাসী। আমেরিকার পশুদের উপর অত্যাচারবিরোধী এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘এএসপিসিএ’-র তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর সে দেশে গড়ে ১৬ লক্ষ কুকুর দত্তক নেওয়া হয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলি থেকে। তবে এই ব্যবস্থায় কিছু খামতিও রয়েছে। কারণ, আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে পথকুকুরদের রাখার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। ওই সময়সীমার মধ্যে সারমেয়দের দত্তক নেওয়া না-হলে বা পুরনো মালিক সেই কুকুরকে নিতে না-এলে, ওই সারমেয়দের মেরে ফেলা হয়। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার পথকুকুরকে মেরে ফেলা হয়েছে আমেরিকায়।

শুধু আমেরিকাতেই নয়, পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য মেরে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে রাশিয়াতেও। রাজধানী মস্কোতেও পথকুকুরের সমস্যা রয়েছে। ২০২৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি আইন চালু করেন। ওই আইন অনুসারে, পথকুকুরদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ম স্থির করতে পারে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে রয়েছে মেরে ফেলার ব্যবস্থাও। পথকুকুরদের মেরে ফেলার ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে রাশিয়ায়। তবে বর্তমানে প্রাচীন ওই ব্যবস্থার বদলে পথকুকুরদের নির্বীজকরণের দিকে জোর দিয়েছে মস্কো।

Advertisement

পাকিস্তানেও পথকুকুরদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের গণহারে মেরে ফেলার প্রথা রয়েছে বলে অভিযোগ। জলাতঙ্কের কারণে প্রতি বছর পাকিস্তানে দুই-পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পথকুকুর রয়েছে সিন্ধ প্রদেশে। কুকুরের কাম়ড়ের ঘটনাও সবচেয়ে বেশি সিন্ধের রাজধানী করাচিতে। যদিও বর্তমানে নির্বীজকরণের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে তারাও। ২০২০ সালে সিন্ধের প্রশাসন পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য গণহারে হত্যার পরিবর্তে ব্যাপক হারে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করতে উদ্যোগী হয়। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তুরস্কেও পথকুকুরদের নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের হত্যার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সে দেশের নিয়ম অনুসারে, পথকুকুরদের ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়। তার পরে যাদের গুরুতর অসুস্থ বলে বিবেচনা করা হয়, তাদের মেরে ফেলা হয়। ‘দ্য প্রিন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে গত বছর থেকেই এই আইন চালু হয়েছে সে দেশে।

তবে এমনও অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই দেশগুলিতে পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের মেরে ফেলার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় কাজ করা হয়। যেমন নেদারল্যান্ডসে দীর্ঘ দিন আগে থেকেই পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ শুরু হয়। শুরুর দিকে তারা কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পোষ্যপিছু করের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। খাজনা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে অনেকেই কুকুরদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে ১৮৬৪ সালে পশুদের সুরক্ষার জন্য একটি সংস্থা গঠিত হয় সে দেশে। তারও পরে চালু হয় পশুসুরক্ষা আইন। দফায় দফায় এই পদক্ষেপগুলির ফলে বর্তমানে পথকুকুরমুক্ত দেশে পরিণত হয়েছে নেদারল্যান্ডস। বর্তমানে সে দেশের প্রতি পাঁচটি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়িতে পোষ্য কুকুর রয়েছে।

অপর এক ইউরোপীয় দেশ স্পেনও পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নির্বীজকরণ এবং সামাজিকীকরণের ব্যবস্থা। প্রত্যেক কুকুরের সঙ্গে মাইক্রোচিপ যুক্ত করা বাধ্যতামূলক। তবে পথকুকুরদের নিষ্কৃতিমৃত্যু এ দেশে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। এক কালে বুলগেরিয়াতেও পথকুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের গণহারে হত্যা করা হত। ১৯৯৯-২০০৬ সালের মধ্যে বুলগেরিয়ায় প্রায় ৭০ হাজার কুকুরকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে আশানুরূপ ফল হয়নি। পরবর্তী সময়ে বুলগেরিয়াতেও নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের পদক্ষেপ শুরু হয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় পথকুকুরের সংখ্যা ৬,৪০০-য় নেমে আসে।

ভারতের পড়শি দেশ ভুটানেও পথকুকুর নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে তারা দেশব্যাপী একটি নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করে। ১৪ বছরের মধ্যে সে দেশের সর্বত্র পথকুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেয় ভুটান প্রশাসন। ‘দ্য প্রিন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের মধ্যে সে দেশের সব পথকুকুরকে নির্বীজকরণ করা হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক দেশে সাধারণ মানুষের জন্যও কঠোর আইন রয়েছে। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় কেউ পথকুকুর বা পথবিড়াল দেখতে পেলে, তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। অন্যথায় তাঁদের শাস্তি হতে পারে। হারিয়ে যাওয়া পোষ্যের মালিকদের খুঁজে বার করার জন্য মাইক্রোচিপের ব্যবস্থাও বাধ্যতামূলক রয়েছে সে দেশে। যে পশুদের কোনও মালিক নেই, তাদের দত্তক নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। আবার সুইৎজ়ারল্যান্ডে পোষ্য কুকুরকে বাড়ি থেকে বার করে দিলে জরিমানার ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পোষ্যকে ত্যাগ করার জন্য তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement