(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝে) এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
১৪টি দেশকে শুল্ক-চিঠি পাঠানোর পরেই ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে বার্তা দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যচুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে এসেছে বলে জানান তিনি। সোমবার রাতভর (ভারতীয় সময় অনুসারে) ১৪টি দেশকে নতুন শুল্কহার জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। তালিকায় রয়েছে ভারতের দুই পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং মায়ানমারও। তার পর থেকেই নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে আলোচনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজ সারেন ট্রাম্প। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন বাণিজ্যচুক্তি নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছি। চিনের সঙ্গেও চুক্তি হয়ে গিয়েছে আমাদের।” ট্রাম্পের দাবি, বাণিজ্যিক ভাবে আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা এগিয়ে গিয়েছে। বাকি দেশগুলি যদি আমেরিকার শর্ত পূরণ না-করে, তবে তাদের নতুন শুল্ক-বিজ্ঞপ্তি ধরানো হবে।
যে দেশগুলিকে চিঠি পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প, তাদের সঙ্গে আসলে আমেরিকার কোনও বাণিজ্যিক বোঝাপড়া হয়ে ওঠেনি। সেই কারণেই নিজেদের সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে ওই দেশগুলিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস। সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, “অন্য যে দেশগুলির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা কোনও চুক্তি করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। তাই আমরা তাদের শুধু একটি করে চিঠি পাঠাচ্ছি। ওই দেশগুলিকে কত শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, তা জানিয়ে দিতে আমরা বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠাচ্ছি।”
এর আগে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার সময়েও ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। চিনের পরেই সম্ভবত ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলতে পারে আমেরিকা, এমনটাও আভাস দিয়েছিলেন তিনি। তবে তা এখনও হয়ে ওঠেনি।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বস্তুত, সোমবার রাত থেকে বাংলাদেশ-সহ ১৪টি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। তালিকায় রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, বসনিয়া, তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তিউনিশিয়া, মায়ানমার, লাওস, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাজাখস্তান এবং মালয়েশিয়া। প্রতিটি দেশকেই প্রায় একই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। আগামী ১ অগস্ট থেকে আমেরিকার বাজারে ওই দেশগুলির পণ্যের উপর কত শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য হবে, তা ওই চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলি যদি কোনও পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করে, তবে আমেরিকাও শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।
সোমবার হোয়াইট হাউসে ভারত-বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মন্তব্য করলেও সেটি নিয়ে বিশদে কোনও ব্যাখ্যা করেননি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন চুক্তি প্রায় অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তবে এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। আমেরিকার প্রতিনিধিদল ভারত থেকে ঘুরে গিয়েছে। ভারতের প্রতিনিধিদলও আমেরিকায় গিয়েছে। একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে আলোচনার জন্য। সম্প্রতি সূত্র মারফত জানা যায়, বাণিজ্যের বেশ কিছু ক্ষেত্রে দু’দেশ সহমত হলেও কৃষিজাত পণ্য-সহ কিছু ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক নিয়ে মতবিরোধ। তবে ভারত যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আশাবাদী, তা কয়েক দিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।