জন রবার্ট বোল্টন
সময়টা ২০০২। হোয়াইট হাউসের শীর্ষে তখন প্রেসি়ডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তাঁরই এক প্রশাসনিক কর্তার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে মার্কিন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে কী ভাবছে বুশ প্রশাসন।’’ উত্তর দিতে গিয়ে ঝাঁকড়া গোঁফের ফাঁকে একটু হেসে হঠাৎ পাশ থেকে একটা বই তুলে দুম করে টেবিলের উপর ফেলে দিয়েছিলেন কর্তাটি। বইয়ের নাম ‘দ্য এন্ড অব নর্থ কোরিয়া’! সেই সঙ্গেই কাটা কাটা ক’টা শব্দ —‘‘হ্যাঁ, আপাতত এটাই আমাদের নীতি।’’
১৬ বছর পরে আরও পাক ধরেছে বটে। তবে এখনও সেই ঝাঁকড়া গোঁফেরই মালিক জন রবার্ট বোল্টন। কাল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন— এপ্রিল থেকে এই বোল্টনই হচ্ছেন তাঁর নয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এইচ আর ম্যাকমাস্টারের জায়গায় আসছেন সত্তর ছুঁইছুঁই বোল্টন। ট্রাম্পের এমন টুইট দেখেই হইচই বেধেছে প্রশাসনের ঘরে-বাইরে। ‘‘আবার ওই যুদ্ধবাজটা কেন’’— ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, এমন প্রশ্ন তুলছেন মার্কিন কূটনীতিকদেরও একাংশ।
এখনও সুযোগ পেলে, ইরাকে হামলার পক্ষেই সওয়াল করেন বোল্টন। এক সময় বারাক ওবামাকে ‘সাম্প্রদায়িক মুসলিম’ বলেও তোপ দেগেছিলেন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে কলম ধরতে গিয়ে উত্তর কোরিয়া, ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে আগ্রাসী হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। অথচ ট্রাম্প নিজেই ইরাক-যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। তা হলে তিনি কেন বোল্টনকে ঘরে ডাকলেন?
কেউ বলছেন, প্রেসিডেন্ট দিশাহীন। তাই ১৪ মাসে দু’বার রদবদল হয়ে গেল তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে। মাইকেল ফ্লিন মাস খানেকও টেকেননি। তাঁকে সরিয়ে গত বছর ম্যাকমাস্টারকে এনেছিলেন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: কেমব্রিজ কাণ্ডে নাম জড়াল নয়া উপদেষ্টার
সেই ম্যাকমাস্টারও এ বার বাদের খাতায়। তবে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা চলছে এবং পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে নিজেই সরে দাঁড়ালেন ম্যাকমাস্টার। ট্রাম্প যেন এরই অপেক্ষায় ছিলেন। ম্যাকমাস্টারকে শুকনো ধন্যবাদ দিয়েই তড়িঘড়ি টুইটারে বোল্টনের নাম ঘোষণা করে দিলেন। বোল্টন এর আগে রোনাল্ড রেগন, সিনিয়র বুশের সঙ্গে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন।
তবু এ বার তাঁর ক্ষমতায় আসায় অনেকেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন। বিশেষত এমন একটা সময়ে, যখন ট্রাম্প নিজেই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা চাইছেন। মানুষ হিসেবেও বোল্টনকে হাত খুলে নম্বর দিচ্ছেন না কূটনীতিকদের বড় অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনের মন্তব্য, ‘‘অত্যন্ত দুর্বিনীত একটা লোক! বড় কর্তাদের তেল দেওয়া, আর অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারই ওঁর স্বভাব।’’ অথচ এই বোল্টনই রিপাবলিকানদের বড় অংশের পছন্দের মানুষ। শোনা যায়, গত বছর বিদেশ সচিব পদেও তাঁর নাম উঠেছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা নাকচ করে দেন শুধু তাঁর ওই ঝোলা-ঝাঁকড়া গোঁফের জন্য!
এ বার তা হলে কী হল? সেই অঙ্কে না গিয়ে এক মার্কিন কূটনীতি বিশেষজ্ঞ কতকটা হুঁশিয়ারি দেওয়ার ঢঙে বললেন, ‘‘বোল্টন তো অনেক দিন থেকেই উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতা বদল চাইছেন। প্রয়োজনে চিনকে চটিয়েও তাইওয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পক্ষে। এ বার বোধ হয় সিট বেল্ট শক্ত করে বাঁধার সময় এল!’’