ঢাকার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। — ফাইল চিত্র।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের জেরে পুড়ে গিয়েছে কোটি কোটি টাকার জিনিস। শুধু তা-ই নয়, এই ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের রফতানি এবং অর্থনীতিতে। সাময়িক ভাবে আটকে যেতে পারে উৎপাদন। বিশ্বের বাজারে হতে পারে নাম খারাপ। এমনটাই জানিয়েছে ‘ঢাকা ট্রিবিউন’। এই ঘটনার পরে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘ইমপোর্ট কার্গো ভিলেজে’ (যেখানে মালপত্র রাখা হয়) আগুন লাগে শনিবার। যে সব পণ্য আমদানি বা রফতানি করা হয়, সেগুলি বিমানে চাপানোর আগে বা নামার পরে রাখা হয় বিমানবন্দরের এই চত্বরে। সেই পণ্যের তালিকায় রয়েছে রেডিমেড পোশাক, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, ফুল, ওষুধ, কৃষিজ দ্রব্য, কুরিয়রের জিনিস, যার মূল্য কোটি টাকার বেশি। এই কার্গো ভিলেজ থেকে রোজ কয়েক হাজার টন পণ্য বিদেশে রফতানি করা হয়। আবার বিদেশ থেকে রোজ আসেও প্রায় হাজার টন পণ্য। এখন বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে একটি গুদামে অস্থায়ী ভাবে জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা কমছে না।
সে সব পণ্য পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে বহু সংস্থা। বহু ক্রেতার তার ফল ভুগছেন। বিমানবন্দরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শুধু পণ্য পুড়ে যায়নি, আমদানি-রফতানির যে একটা শৃঙ্খল রয়েছে, তা ভেঙে গিয়েছে। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’’ মনে করা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে কয়েকশো কোটি বাংলাদেশি টাকার পণ্য।
অগ্নিকাণ্ডের জেরে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক শিল্পের। সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, যে সব রেডিমেড পোশাক বিমানে করে রফতানি করা হয়, সেগুলি গন্তব্যে দ্রুত পাঠানোর প্রয়োজন থাকে। বাংলাদেশে পোশাক উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারী সংগঠন বিজিএমইএ-র ডিরেক্টর বলেন, ‘‘কখনও পণ্য পাঠাতে যদি ২৪ ঘণ্টাও দেরি হয়, তা হলে কখনও কখনও গোটা বরাত বাতিল হয়ে যায়।’’ এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের একাংশ বলছেন, এই ঘটনার কারণে রেডিমেড পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সুনাম ছিল, তা ধাক্কা খেতে পারে।
বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারী সংগঠন (বিকেএমইএ) সভাপতি মহম্মদ হাতেম বলেন, ‘‘কার্গো ভিলেজের মতো সংবেদনশীল জায়গায় এ রকম অগ্নিকাণ্ড মানা যায় না। অনেক দিন ধরে আমরা অভিযোগ করেছি। সব পণ্য খোলা পড়ে থাকে। কোনও নিরাপত্তা নেই।’’ এর আগে মিরপুর, চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় আগুন লেগেছিল। এ বার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগল। তার জেরে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীদের একাংশ। হাতেম এই নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা দুর্ঘটনা না কি নাশকতা— তা তদন্ত করে দেখা উচিত।’’
অগ্নিকাণ্ডে কত ক্ষতি হয়েছে, তার তথ্য দিতে সংস্থাগুলিকে ইতিমধ্যে জানিয়েছে ওই সংগঠন। তবে সংস্থার কর্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, আরও দু’-তিন দিনে স্পষ্ট হবে বিষয়টি। বাংলাদেশের রফতানিকারীদের সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, তাড়াতাড়ি বিমানবন্দরের ওই কার্গো ভিলেজ চালু করা হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমতে পারে। কারণ যে সব জিনিস রফতানি করা হয়, তার অনেক কিছুই (যেমন সবজি, ফল, পান) পচনশীল। বেশি দিন বিমানবন্দরে পড়ে থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। বিকেএমইএ-র কার্যকরী সভাপতি ফাজ়ল শামিম এহসান জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের ওই কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় অনেক কাঁচামালও পুড়ে গিয়েছে। ফলে উৎপাদনে ধাক্কা খেতে পারে। রফতানি বাণিজ্যও বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশের। এর প্রভাব পড়তে পারে সে দেশের অর্থনীতিতে।
সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ বলছে, প্রতিদিন বাংলাদেশের ওই বিমানবন্দর থেকে ১,৫০০ থেকে ২০০০ টন পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। বিমানবন্দরের ওই কার্গো ভিলেজ বন্ধ থাকলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ আগুন লাগে ঢাকা বিমানবন্দরের ‘কার্গো হোল্ড’ এলাকায়। দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। আগুন লাগার ঘটনার পরেই ওই বিমানবন্দরে সাময়িক ভাবে উড়ান পরিষেবা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নামাতে হয় সেনাও। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনীও কাজ করে। উড়ান পরিষেবা শনিবার রাতেই চালু হলেও কার্গো ভিলেজ এখনও কার্যকর হয়নি।