গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সচিবালয়ে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে এক দিনের জন্য আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করলেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীরা। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল করার বিষয়ে কর্মচারীরা যে দাবি জানিয়েছেন, বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তুলে ধরবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবেরা। সে কারণেই আন্দোলনে এই বিরতি।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণকের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ-সহ কয়েকজন সচিবের সঙ্গে আন্দোলনকারী কর্মচারী নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভূমিসচিব সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁকে এবং আরও কয়েক জন সচিবকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার তাঁরা আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছেন। সালেহ বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের কথা বুধবার সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আমরা জানাব।’’
আন্দোলনকারী নেতা, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’-এর সহ-চেয়ারম্যান তথা ‘সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ’-এর একটি গোষ্ঠীর সভাপতি মহম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, তাঁরা বুধবার কোন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন না। প্রসঙ্গত, এ বারের সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে ইউনূস সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি শেখ হাসিনার আমলের ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি আইন সংক্রান্ত আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স)-এর খসড়া অনুমোদিত হয়। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আন্দোলনে নামেন সে দেশের সরকারি কর্মীদের বড় একটি অংশ।
আন্দোলনের মধ্যেই গত রবিবার নয়া অধ্যাদেশ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়ে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই সচিবালয়ের ভিতর সেখানকার কর্মচারী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এমনকি সাংবাদিকদেরও নয়। মূল প্রবেশপথের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী ‘সোয়াট’। আঁটসাঁট নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় সচিবালয়, ইউনূসের সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ এবং সংলগ্ন এলাকাকে। এই এলাকায় মিটিং-মিছিল, সভা করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ইউনূস সরকারের নয়া অধ্যাদেশ অনুসারে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীরা যদি এমন কোনও কাজ করেন, যা সরকার বা প্রশাসনের প্রতি আনুগত্যের পরিপন্থী, তা হলে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে। তা ছাড়া যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ছুটি নিলে, সহকর্মীকেও এই কাজে প্ররোচিত করলে কিংবা নির্দিষ্ট কাজ করতে ব্যর্থ হলেও সরকারি কর্মচারীদের চাকরি যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে নয়া অধ্যাদেশে। অধ্যাদেশ অনুসারে, উপরিউক্ত সব ক’টি কারণই অপরাধ। কোনও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে। কোনও কর্মচারী দোষী সাব্যস্ত হলে কেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে না, তা জানাতে সাত দিন সময় দেওয়া হবে। শাস্তি পেলে সেই কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যাবে না।
ওই সংশোধিত অধ্যাদেশকে ‘কালো অর্ডিন্যান্স’ বলে অভিযোগ করে আন্দোলনে নেমেছেন একাধিক কর্মচারী সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই অধ্যাদেশ সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করা না-হলে আন্দোলন চলবে। ইউনূস সরকার এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলনরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ করার পথে হাঁটেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম সমর্থক, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের দল ন্যাশনাল সিটিজ়েন পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লা সরকারি কর্মচারীদের সমালোচনা করেছেন। হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, আন্দোলনরত কর্মীদের অন্যত্র বদলি করা হতে পারে। সরকারি কর্মীদের এই আন্দোলনের মধ্যেই, বেতনবৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা পুনরায় কাজে যোগ না-দিলে প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।