eid

Eid: ধর্মের বেড়া ভেঙে বিনয়ের কুরবানি

নাজমা এবং তাঁর স্বামী জান মহম্মদ ছাগল কুরবানি দিতেন এই বিশেষ পরবে। বিনয় এবং তাঁর স্ত্রী সুলতাকে সন্তান জ্ঞানে গ্রহণ করেন তাঁরা।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১ ০৬:৩২
Share:

বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক

ঠাকুরঘরে বাবা লোকনাথের পাশে রয়েছে তাঁর ছবিও। প্রিয় মামণি নাজমা বেগমকে রোজই মনে পড়ে বিনয়কৃষ্ণ মল্লিকের।

Advertisement

মামণি চলে গিয়েছেন ২৮ বছর হল। তাঁর স্মৃতিই শক্তি, ইদুজ্জোহায় ক্ষুধার্ত আর্তজনের পাশে দাঁড়াতে। ভারতে পাচার বাংলাদেশি মেয়েদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের সঙ্গে জড়িয়ে যশোরের বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। নানা সেবাকাজের পাশাপাশি বকরি ইদের ইসলামি আচারের সঙ্গেও অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।

নাজমা এবং তাঁর স্বামী জান মহম্মদ ছাগল কুরবানি দিতেন এই বিশেষ পরবে। বিনয় এবং তাঁর স্ত্রী সুলতাকে সন্তান জ্ঞানে গ্রহণ করেন তাঁরা। বিনয়ের জীবনে কুরবানি মানে মামণির স্পর্শ। প্রতি ইদে এতিমখানার বালকদের ছাগমাংস খাওয়ান বিনয়।

Advertisement

দুঃস্থকে পশুমাংস বিলি ইদুজ্জোহায় অবশ্য পালনীয় রীতি। তবে অন্য ভাবেও গরিবের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন অনেকে। যেমন এ বার শতাধিক পরিবারকে লাচ্চা, সিমুই, দুধ, চিনি, কিসমিসও পৌঁছে দিয়েছেন বিনয়বাবু। তাঁর শান্তি, অতিমারিতে মিষ্টিমুখটুকু হবে ওঁদের।

উপমহাদেশের মানুষের সত্তার বহু স্বর মেলে ধরার গুরুত্বের কথা বার বার বলেছেন অমর্ত্য সেন। হিন্দু বা মুসলিম সত্তার ঘেরাটোপে প্রগতির পথও রুদ্ধ হয়ে পড়ে। ৬৮ বছরের প্রবীণ বিনয়বাবুর জীবনও ধর্মের বেড়া ভেঙে মানবতাকে অনুভবের যাত্রা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মাদারিপুরের নবগ্রামে খানসেনাদের সঙ্গে লড়েছেন। বিনয়ের এক ভাইপো গুলিতে নিহত হন। কিন্তু রামদা হাতে বিনয়দের প্রতিরোধে চার জন পাকসেনাও খতম হয়েছিল। সপরিবার সীমান্ত পেরিয়ে সল্টলেকের শিবিরে ঠাঁই নেন তাঁরা। আরও অনেক হিন্দু পরিবারের মতো এই বাংলায় জমি কেনা পাকা হয়ে যায়। কিন্তু শেষমেশ দেশকে ভুলতে পারেননি বিনয়েরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ-র পরে যশোরে পিসির বাড়িতে যেতে আসতেই মামণির সঙ্গে বিনি সুতোর বন্ধন। বিনয়ের হবু স্ত্রীও থাকতেন ওই পাড়ায়। নিঃসন্তান নাজমা বেগমই চার হাত মিলিয়ে দেন। যশোরে থাকতে শুরু করেন বিনয়। মামণির মৃত্যুর পরে দাফনকাজের ভার নেন বিনয়ই। ২৭ রমজান মামণির মৃত্যুদিনে বিরাট ইফতার, সমগ্র কোরান পাঠের উদ্যোগেও জড়িত বিনয়বাবু। তিন ছেলে, তিন মেয়ের ঢাকায় থিতু। বাংলাদেশের অর্ধশতকের পথ চলায় বিনয়ের অভিজ্ঞতা, বাবরি মসজিদ-কাণ্ডের পরেও বেশির ভাগ মানুষই শান্তি, ভ্রাতৃত্বে আস্থা রেখেছেন। দেশ ছাড়ার কথা ভাবতেই পারেন না। ‘‘মানুষকে ধর্মের ঊর্ধ্বে দেখাটা মজ্জায় মিশে গিয়েছে,” কুরবানির দিনে বলছিলেন বিনয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন