গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারত থেকে রফতানি হওয়া পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কয়েক ঘণ্টা পরে বুধবার (আমেরিকার সময়ে) পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলার কথা ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, পাকিস্তানে সঞ্চিত ‘বিশাল তৈলভান্ডার’-এর উন্নতির জন্য হাত মিলিয়ে কাজ করবে আমেরিকা। তিনি সমাজমাধ্যমে এ-ও লিখেছেন যে, এক দিন ভারতকেও তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান। এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তানে ঠিক কতটা তেল সঞ্চিত রয়েছে?
পরিসংখ্যান প্রদানকারী ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’ বলছে, ২০১৬ সালে মেলা তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানে ৩৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ব্যারেল খনিজ তেল রয়েছে। সঞ্চিত তেলের পরিমাণের নিরিখে বিশ্বে পাকিস্তান ৫২তম স্থানে রয়েছে। পৃথিবীতে মোট যত তেল সঞ্চিত রয়েছে, তার ০.০২১ শতাংশ রয়েছে পাকিস্তানে। ওই দেশে প্রতি দিন খরচ হয় ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ব্যারেল তেল। প্রতি দিন তারা উৎপাদন করে ৮৮ হাজার ২৬২ ব্যারেল তেল। যদি পাকিস্তান আমদানি না করে, তা হলে তাদের কাছে যে তেল মজুত রয়েছে, তা দিয়ে দু’বছরের প্রয়োজন মিটবে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশাসন (আইটিএ)-এর ২০২১ সালের রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানের মোট যত খনিজ তেল প্রয়োজন, তার ২০ শতাংশ চাহিদা মেটায় সে দেশে সঞ্চিত তেল। প্রয়োজনের বাকি ৮০ শতাংশ তেল আমদানি করতে হয়।
এক মাস আগে পাকিস্তানের সরকারি তেল এবং গ্যাস উন্নয়ন সংস্থা (ওজিডিসিএল) সিন্ধ প্রদেশে খনিজ তেল এবং গ্যাসের ভান্ডার খুঁজে পেয়েছে। গত এক বছরে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশ এবং খাইবার পাখতুনখোয়াতেও তেল এবং গ্যাসের ভান্ডার খুঁজে পেয়েছে ওজিডিসিএল। তিন বছর ধরে সমীক্ষা চালানোর পরে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান এই বিশাল ভান্ডারের খোঁজ মিলেছে বলে খবর। কিছু সমীক্ষা বলছে, পাকিস্তানে যে তেল এবং গ্যাসের সঞ্চয়ের সন্ধান মিলেছে, তা নেহাত কম নয়। পৃথিবীতে যে দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি খনিজ তেলের ভান্ডার রয়েছে, সেগুলি হল ভেনেজ়ুয়েলা, সৌদি আরব, ইরান। কিছু সমীক্ষায় দাবি, এই তিনটি দেশের পরে চতুর্থ স্থানে থাকতে পারে পাকিস্তান।
তবে সেই দাবির সপক্ষে প্রমাণ মেলেনি। কোনও বাণিজ্যিক তেল উত্তোলনকারী সংস্থাও এই নিয়ে মুখ খোলেনি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও মনে করেন, পাকিস্তানে তেল উত্তোলন নিয়ে তেমন পরিকল্পনা নেই। সে কারণে সমস্যা তৈরি হতে পারে। ওই তেল ভান্ডারকে কাজে লাগানোর জন্য খরচ হতে পারে ৫০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। কোথায় তেল রয়েছে, কোথা থেকে তোলা যাবে, তা নিশ্চিত করে ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য সময় লাগবে প্রায় পাঁচ বছর। পরিকাঠামো গঠন করতে খরচ আরও। পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা বর্তমানে যা, তাতে এই প্রকল্পে এত খরচ করা কী ভাবে সম্ভব, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন, পাকিস্তানে যে বিশাল তৈলভান্ডার রয়েছে, তার উন্নতির জন্য ওয়াশিংটন এবং ইসলামাবাদ যৌথ ভাবে কাজ করবে। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, “আমরা এইমাত্র পাকিস্তানের সঙ্গে একটা চুক্তি সেরে ফেললাম। চুক্তি অনুযায়ী সে দেশের বিশাল তৈলভান্ডারের উন্নতিতে পাকিস্তান এবং আমেরিকা যৌথ ভাবে কাজ করবে।” একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সংযোজন, “কে বলতে পারে, হয়তো পাকিস্তান এক দিন ভারতকে তেল বিক্রি করবে।” ওই পোস্টেই ট্রাম্প জানিয়েছেন, দুই দেশের এই বোঝাপড়ায় কোন তেল উত্তোলনকারী সংস্থা নেতৃত্ব দেবে, তা তাঁর প্রশাসন ঠিক করবে। দুই দেশ যৌথ ভাবে কাজ করলে আমেরিকাকে তেল দিয়ে বিনিময়ে অর্থ (পেট্রোডলার) পেতে পারে পাকিস্তান। প্রশ্ন উঠছে, কতটা তেল সঞ্চিত রয়েছে পাকিস্তানের।