International News

অভিনন্দনের চোখ-হাত বাঁধা ভিডিয়ো দেখেই পাকিস্তানে মিসাইল তাক করেছিল ভারত!

নয়াদিল্লি সরাসরি হুমকি দেয়, পাকিস্তানের মাটিতে ছ’টি মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ১৭:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

অভিনন্দন বর্তমানের চোখ এবং হাত বাঁধা ছবি দেখার পরই যুদ্ধের হুঙ্কার ছেড়েছিল ভারত। মিগ-২১ বনাম এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ডগফাইটের পর সরাসরি ভারত-পাক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ছ’টি মিসাইল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তাক করে রেখেছিল নয়াদিল্লি। পাল্টা প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইসলামাবাদও। নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের একাধিক সূত্র অনুযায়ী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, ওই সময় দু’দেশের সম্পর্ক এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে, মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই যেত।

Advertisement

একটি সূত্রে এও দাবি, পাকিস্তানের উদারতা নয়, মার্কিন চাপেই ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল ইমরান খানের সরকার। এবং সেই সিদ্ধান্তের পরই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। কারণ, অভিনন্দনকে ফেরানোর সিদ্ধান্তের পর ভারত কিছুটা নরম অবস্থান নেয়।

কেমন যুদ্ধের আবহ ছিল সেই সময়? সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, অভিনন্দনের ওই ভিডিয়ো দেখার পরই ভারতীয় কূটনৈতিক এবং সামরিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। নয়াদিল্লি সরাসরি হুমকি দেয়, পাকিস্তানের মাটিতে ছ’টি মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হবে। তবে কী ধরনের মিসাইল বা কোথায় সেগুলি ফেলা হবে, নয়াদিল্লির তরফে সে সব স্পষ্ট করা হয়নি সেই সময়। এই খবর পেয়েই পাকিস্তানও পাল্টা হুঙ্কার ছাড়ে, ভারত একটা মিসাইল ফেললে তারা তিনটি ফেলবে। এই উত্তেজনার আঁচ পেয়েই তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করে আমেরিকা। উত্তেজনা এতটাই চরমে ছিল যে দুই প্রতিবেশী দেশকে নিরস্ত করতে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে পর্যন্ত ময়দানে নামতে হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভারত-পাক দ্বন্দ্ব কবে, কেন? দেখে নিন আপনি কতটা জানেন

আরও পড়ুন: আজহার নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বুঝি, সমস্যার সমাধান হবে, বললেন নয়াদিল্লির চিনা রাষ্ট্রদূত

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমা ফেলে আসে ভারতীয় বায়ুসেনা। পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আকাশসীমায় ঢোকে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬। সেই সময়ই মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে পাক যুদ্ধবিমানগুলিকে তাড়া করেন অভিনন্দন এবং শুরু হয় ‘ডগফাইট’। পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ ধ্বংসের পর অভিনন্দনের যুদ্ধবিমানও ধ্বংস হয় এবং তিনি অবতরণের পর পাক সেনার হাতে বন্দি হন। ওই ঘটনার পর পাক সেনার একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, অভিনন্দনের চোখ বাঁধা। হাতও পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে। এই ছবি দেখার পরই ভারতীয় গোয়েন্দা এবং সামরিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লির সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টার্সের দাবি, পাক সেনার ওই ভিডিয়ো দেখেই ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ‘সিকিওর লাইনে’ সরাসরি পাক আইএসআই প্রধান আসিম মুনিরকে ফোন করেন। ডোভাল পাকিস্তানকে জানিয়ে দেন, অভিনন্দনকে তারা আটক করলেও পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাস দমনে ভারত পিছপা হবে না। পাকিস্তানের মাটিতে যে সব জঙ্গিরা খোলাখুলি ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কিছুতেই রেয়াত করবে না ভারত। সেই সময়ই ছ’টি মিসাইল হামলা চালানোর কথাও জানতে পারেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

আরও পডু়ন: প্রয়াগরাজ থেকে বারাণসী, ভোটপ্রচারে কাল গঙ্গায় ১৪০ কিলোমিটার নৌসফর শুরু প্রিয়ঙ্কার

রয়টার্সের আরও দাবি, পাক সরকারের এক মন্ত্রী এবং পশ্চিমী এক কূটনৈতিক আলাদা ভাবে নিশ্চিত করেছেন যে, ওই সময়ই ভারত অন্তত ছ’টি মিসাইল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ‘টার্গেট’ করে রেখেছিল। পাকিস্তানের ওই মন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে যোগাযোগ করেছিল। নাম প্রকাশে ওই মন্ত্রীর দাবি, ইসলামাবাদও বলে দিয়েছিল, ‘‘আপনারা একটা মিসাইল ফেললে আমরা তিনটি ছাড়ব। ভারত যাই করবে, আমরা তার তিন গুণ প্রত্যাঘাত করব।’’ তবে অজিত ডোভালের অফিস রয়টার্সকে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। পাক সেনাও এ নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়ছে। আসিম মুনিরও রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

অভিনন্দনকে ফিরিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু তার পিছনে কি শুধুই ইমরান সরকারের মহানুভবতা কাজ করেছে? রয়টার্সের দাবি অনুযায়ী, উত্তরটা না। হোয়াইট হাউস যে জন বোল্টন-সহ এক ঝাঁক কুটনীতিককে ময়দানে নামিয়েছিল দু’দেশের উত্তেজনা প্রশমনে, তাতেই চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। কারণ অভিনন্দনের যে ভিডিয়ো পাক সেনা ছড়িয়েছিল, তা জেনিভা কনভেনশনের পুরোপুরি বিরোধী ছিল। যুদ্ধবন্দির সঙ্গে এ ভাবে আচরণ করায় পাকিস্তান তীব্র চাপে পড়ে যায়। সেই চাপেই পরে চা খেতে খেতে অভিনন্দনের পাক সেনাকর্তাদের প্রশ্নোত্তরের একটি ভিডিয়ো ছাড়া হয়। এবং শেষ পর্যন্ত অভিনন্দনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন