মানবাধিকার প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের ঢাল হল দিল্লি!

জেনিভায় চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বৈঠকটি হয়েছে। আমেরিকা ছাড়া ব্রিটেন, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেনের মতো রাষ্ট্রগুলি সেখানে চিনের কড়া সমালোচনা করেছে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:১১
Share:

আপাতত কোনও স্তরেই ড্রাগনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতে যেতে চাইছে না মোদী সরকার।

চিনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের ‘ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ’ (ইউপিআর) বৈঠকে বেজিং-এর কড়া সমালোচনা করল ১৩টি দেশ। এর মধ্যে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ শামিল হলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মুখ খুলল না ভারত। উল্টে চিনের মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন ভারতীয় প্রতিনিধি। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ডোকলাম পর্বের পর সীমান্তই হোক অথবা আলোচনার টেবিল— আপাতত কোনও স্তরেই ড্রাগনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতে যেতে চাইছে না মোদী সরকার।

Advertisement

জেনিভায় চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বৈঠকটি হয়েছে। আমেরিকা ছাড়া ব্রিটেন, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেনের মতো রাষ্ট্রগুলি সেখানে চিনের কড়া সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, লাখ দশেক উইঘুর মুসলিম ও কিছু সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নারকীয় পরিবেশে আটকে রেখেছে চিন সরকার। যে শিবিরে তাদের রাখা হয়েছে তা মানুষের বসবাসের অযোগ্য। উপস্থিত চিনা প্রতিনিধি দলের নেতা উপ-বিদেশমন্ত্রী লি ইউচেং অবশ্য সম্মিলিত আক্রমণ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবেই বেজিংকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রশ্নে জিনজিয়াং প্রদেশ যতটা সম্ভব করছে তাঁর সরকার। সেখানে জঙ্গিদের একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি ইউচেংয়ের।

রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি (উপ) বীরেন্দ্র পল চিনের সমালোচনার রাস্তাতেই হাঁটেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আবাসন, জনস্বাস্থ্য পরিষেবা, মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক মানুষের জন্য চিন যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, ভারত তার প্রশংসা করছে।’’ ভারতীয় এই কূটনীতিকের মতে— সে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বিচারব্যবস্থার সংস্কার, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রগুলিতেও চিন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থা রুখতে নিয়ম বদল গুগ্‌লে

ভূকৌশলগত রাজনীতিতে বেজিং যখন নয়াদিল্লির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে চিনকে এই উদার শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আবার এমন একটি মঞ্চে এই শংসাপত্র দেওয়া হল, সেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অন্তর্ভুক্তি আটকে রেখেছে এই চিনই। একটি অংশের বক্তব্য, দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে কৌশলগত ক্ষেত্রে আর অস্বস্তি বাড়াতে চায় না মোদী সরকার। ডোকলামে নিজেদের দুর্বলতা প্রকট হয়ে যাওয়ার পর বহু কষ্টে জোড়াতালি দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামত করা গিয়েছে। চলতি মাসের শেষেই আর্জেন্টিনায় জি-২০ দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনে মুখোমুখি হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। তাই মুখোমুখি সংঘাত এড়াতেই এই কৌশল বলে অনেকে বিষয়টির ব্যাখ্যা করছেন।

আরও পড়ুন: তালিবানের সঙ্গে বৈঠক, বিতর্কে মোদী সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন