টিকা নেওয়ার লাইনে অপেক্ষায় ছবি রয়টার্স।
কাল থেকে ব্রিটেনে কড়াকড়ি কমছে আরও এক ধাপ। বেশির ভাগ অফিস-কাছারি-ব্যবসা সম্পূর্ণ ভাবে খুলে দেওয়া হবে। টিকাকরণে সাফল্যের জোরেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু ব্রিটেনের এক শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীর স্পষ্ট হুশিয়ারি, ভারতীয় স্ট্রেন বি.১.৬১৭.২-র বিরুদ্ধে প্রায় কোনও কাজ দিচ্ছে না প্রতিষেধক। সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। ফলে করোনাবিধি লঘু করলে বিপদে পড়তে হবে ব্রিটেনকে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্টনি হার্নডেন ‘জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজ়েশন’ (জেসিভিআই)-এর উপপ্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউন তুলে দেওয়ার আগে ভীষণ সাবধান হওয়া জরুরি। কারণ এখনও বিষয়টা অস্পষ্ট, ভারতীয় স্ট্রেনটির সংক্রমণ ক্ষমতা ঠিক কত গুণ।’’ তবে এ-ও জানিয়েছেন হার্নডেন, স্ট্রেনটির মারণ ক্ষমতা বেশি হওয়ার প্রমাণ মেলেনি। আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন তিনি— ‘‘ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তির হয়তো বাড়াবাড়ি হতে দেবে না। অল্প জ্বর, কষ্ট হবে। কিন্তু সংক্রমণ রুখে দেওয়ার ব্যাপারে টিকা একেবারেই কার্যকরী নয়।’’
ভারতীয় স্ট্রেনটি নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন ব্রিটেন। গত কাল প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ২১ জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ ‘স্বাধীনতার’ যে রোডম্যাপ বানিয়েছিলেন তিনি, তা হয়তো বাস্তবে কার্যকর না-ও হতে পারে। এ-ও জানান, পুরোটাই নির্ভর করছে গবেষণার রিপোর্ট কী বলছে, তার উপর। দেশজুড়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ভারতীয় স্ট্রেন নিয়ে। সবে নিজেদের কেন্ট স্ট্রেনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে ব্রিটেন। হার্নডেন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই, যা থেকে জানা সম্ভব স্ট্রেনটি কতটা সংক্রামক। মানে, এর সংক্রমণ ক্ষমতা অন্য স্ট্রেনগুলির থেকে কত গুণ বেশি। যা তথ্য রয়েছে, সবেতে দেখা যাচ্ছে, এই স্ট্রেনে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। এবং টিকা নেওয়া থাকলেও সংক্রমণ হতে পারে।’’
বরিস জনসনও ঠিক এই কথাটিই বলেছেন সাংবাদিক বৈঠকে— ‘‘বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও অজানা।’’ তিনি বলেন, ‘‘গবেষণায় যদি দেখা যায় স্ট্রেনটি সামান্য বেশি সংক্রামক, তা হলে যেমন লকডাউন ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তাই হবে। কিন্তু এর সংক্রমণ ক্ষমতা যদি দেখা যায় মারাত্মক, সে ক্ষেত্রে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্তই নিতে হবে। লকডাউন চালিয়ে যেতে হবে।’’
ও দিকে, বিশ্বের একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, ভাইরাসটি যে গবেষণাগারে তৈরি করা বলে সন্দেহ রয়েছে, সে বিষয়ে আর গূঢ় তদন্ত হওয়া উচিত। এই দলে রয়েছেন ১৮ জন বিজ্ঞানী। যেমন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট রবীন্দ্র গুপ্ত, ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী জেস ব্লুম, স্ট্যানফোর্ডের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ডেভিড রেলম্যান। ডেভিড বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাবশত ল্যাব থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার অনুমান কিন্তু এখনও কেউ নস্যাৎ করে দিতে পারেনি।’’ তাঁদের বক্তব্য, যত ক্ষণ না অকাট্য প্রমাণ মিলছে, এ বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত।