নতুন কৌশলে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করা হচ্ছে, দাবি ইরানের। ছবি: রয়টার্স।
ইজ়রায়েলের বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার নতুন কৌশল বার করে ফেলল ইরান? তাদের রেভলিউশনারি গার্ড (আইআরজি) তেমনটাই দাবি করেছে। শুধু তা-ই নয়, আইআরজি-র দাবি, তাদের নতুন কৌশলে নাজেহাল হয়ে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা-অস্ত্রগুলি একে অপরকে নিশানা করতে শুরু করেছে। আইআরজি-কে উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সোমবার ভোরে ইজ়রায়েলের দুই শহরে নতুন করে হামলা চালিয়েছে তেহরান। তেল আভিভ এবং উত্তর ইজ়রায়েলের বন্দর শহর হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হয়েছে। সেই হামলার পরেই আইআরজি নতুন কৌশলের কথা বলেছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে তেল আভিভে। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
সোমবার ভোরে ইরানের নতুন হামলায় ইজ়রায়েলে অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। শুক্রবার থেকে এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী ইজ়রায়েলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩। আহত শতাধিক। তেল আভিভে ভোরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। বাদ যায়নি জেরুসালেমও। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের হামলায় তেল আভিভে নতুন করে একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। তেল আভিভে আমেরিকার দূতাবাস থেকে কয়েকশো মিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়তে দেখা গিয়েছে। সামান্য ক্ষতি হয়েছে দূতাবাস ভবনটিরও। একই সঙ্গে হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে অন্তত ৩০ জন জখম হয়েছেন বলে খবর। হাইফা বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে আগুন লেগে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, ইজ়রায়েলের এই হাইফা বন্দরটির একটি ভারতের আদানি গোষ্ঠী পরিচালিত। রবিবার হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। আদানিরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, বন্দর এখনও সক্রিয় আছে। তবে সোমবারের হামলার পর এই বন্দরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়। দেশের সকল নাগরিককে আশ্রয়ে (শেল্টার) ঢুকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইজ়রায়েল প্রশাসন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড বলেছে, ‘‘আমাদের অভিযানে যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, তা লক্ষ্যবস্তুতে সফল ভাবে সর্বাধিক আঘাত হেনেছে। আমেরিকা তথা পশ্চিমি বিশ্বের সমর্থন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ওদের কাছে থাকা সত্ত্বেও।’’ সোমবারের এই হামলা প্রসঙ্গে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি ইজ়রায়েলি সেনা। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কাট্জ় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘তেহরানের বাসিন্দাদের এর মূল্য চোকাতে হবে।’’
ইজ়রায়েলের হাফিয়ায় সোমবার ভোরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানা। ছবি: রয়টার্স।
ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। আমেরিকার প্রস্তাবিত পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হয়নি তেহরান। এর মাঝেই শুক্রবার ইরানে আচমকা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ‘চিরশত্রু’ ইজ়রায়েল। তাতে ইরানের চার শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি এর পরেই দিয়ে দিয়েছিল ইরান। তার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ জোরালো হয়েছে। কাতার এবং ওমান সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ইরানের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, ইরান তা খারিজ করে দিয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, ইজ়রায়েলের হামলার প্রত্যাঘাত সম্পূর্ণ না-হওয়া পর্যন্ত তারা থামবে না। ইজ়রায়েল থেকেও পাল্টা হামলা চলছে। তেহরানে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হচ্ছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ইজ়রায়েলি হামলায় এখনও পর্যন্ত ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের ৯০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক।