Excavation to identify babies

৭৯৬ শিশুকে সেপটিক ট্যাঙ্কে পুঁতে দিয়েছিলেন সন্ন্যাসিনীরা! রহস্যের জট খুলতে গণকবর খোঁড়া শুরু হল আয়ারল্যান্ডে

মৃত শিশুদের দেহাবশেষের খোঁজে আয়ারল্যান্ডের তুয়াম শহরের সেই পুরনো হোমের জমিতে খননকাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ১৮ সদস্যের একটি দল খননকাজ চালাবে। সেই দলে আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, স্পেন ও আমেরিকার প্রত্নতত্ত্ববিদেরা রয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৮
Share:

এই জমিতে শুরু হয়েছে খননকাজ। ছবি: রয়টার্স।

৩৬ বছরে হোমে ৭৯৬ শিশুর মৃত্যু! কিন্তু এর কোনও রেকর্ড নেই, নেই কোনও সমাধিফলকও। তা হলে তাদের কবর দেওয়া হল কোথায়?

Advertisement

এই প্রশ্নই কুরে কুরে খেয়েছিল ক্যাথরিন কর্লেসকে! উত্তরের খোঁজ করতে গিয়ে বহু বছর আগের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল তাঁর। সেই হোমের জমিতে আপেল কুড়োতে গিয়ে হাড় খুঁজে পেয়েছিল দুই শিশু। কিন্তু তা নিয়ে তখন কোনও শোরগোল হয়নি, কোনও তদন্তও হয়নি। সেই ঘটনা কার্যত ধামাচাপাই দেওয়া হয়েছিল সেই সময়।

ক্যাথরিন নিজেই ৩৯ বছর আগের সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। স্থানীয় মানচিত্র এবং আরও কিছু নথি ঘেঁটে হোমের জমিতে একটি সেপটিক ট্যাঙ্কের খোঁজ পান, ঠিক যে জায়গা থেকে হাড় উদ্ধার করেছিল দুই শিশু। ক্যাথরিনের সন্দেহ হয়, তা হলে কি ওই সেপটিক ট্যাঙ্কেই গণকবর দেওয়া হয়েছিল হোমের শিশুদের? বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন ক্যাথরিন। শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। শুরু হয় তদন্তও। জানা যায়, ক্যাথরিন যা ভেবেছিলেন, তা-ই ঘটেছে। সেই সেপটিক ট্যাঙ্কেই হোমের শিশুদের কবর দেওয়ার কথা স্বীকার করেন ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনীদের একাংশ। সেই তদন্তেরই একটি ধাপ সম্পূর্ণ হল সোমবার।

Advertisement

মৃত শিশুদের দেহাবশেষের খোঁজে আয়ারল্যান্ডের তুয়াম শহরের সেই পুরনো হোমের জমিতে খননকাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ১৮ সদস্যের একটি দল খননকাজ চালাবে। সেই দলে আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কলম্বিয়া, স্পেন এবং আমেরিকার প্রত্নতত্ত্ববিদেরা রয়েছেন। ক্যাথরিন বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত এটা হচ্ছে দেখে স্বস্তি পেলাম। অনেক দিন ধরে এটার পিছনে লেগে রয়েছি। দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করে রয়েছি। আজ আমার আনন্দের দিন।’’

ক্যাথরিন নিজে একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করেন। পাশাপাশি স্থানীয় ইতিহাস নিয়েও গবেষণা করেন। ক্যাথরিন জানান, ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে ৭৯৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল তুয়ামের ‘সেন্ট মেরিস মাদার অ্যান্ড বেবি হোমে’। ‘বন সিকোর্স সিস্টার্স’ নামে একটি ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত ওই হোমে মূলত অবিবাহিত মা এবং তাঁদের সন্তানদের রাখা হত। পরে শুধু সন্তানদেরই রেখে দেওয়া হত। হোম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হত মায়েদের। ১৯৬১ সালে হোমটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে একটি আবাসন তৈরি হয়। ১৯৭৫ সালে সেই আবাসনের দুই শিশু হাড়ের খোঁজ পেয়েছিল আপেল কুড়োতে গিয়ে। ওই ঘটনাই তাঁর গবেষণায় সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন ক্যাথরিন।

তদন্তে গণকবরের কথা স্পষ্ট হওয়ার পরেও বারবার খননকাজ পিছিয়ে গিয়েছিল নানা কারণে। ২০২৩ সালে এ নিয়ে একটি আইনও পাশ হয় আয়ারল্যান্ডে। তার পরেই গতি পায় খননকাজের প্রক্রিয়া। যাঁর নেতৃত্বে এই খননকাজ চলবে, সেই ড্যানিয়েল ম্যাকসুইনি বলেন, ‘‘কাজটা খুবই কঠিন। এটা এখন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাজের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। প্রথম কাজ হল, দেহাবশেষ খোঁজা। এর পর ডিএনএ পরীক্ষা করা। ডিএনএ মিলে গেলে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে, যাতে নিয়ম মেনে শিশুদের কবর দেওয়া যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement