বিয়েবাড়িতে আইএস হানা, কাবুলে হত ৬৩

এই হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ বলে বর্ণনা করে  আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি বলেছেন, ‘‘জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে তালিবানই।’’ যদিও তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দেয় জঙ্গি গোষ্ঠীটি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা 

কাবুল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০৬:০৮
Share:

হাহাকার: আইএস হামলায় নিহত আত্মীয়ের কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক যুবক। রবিবার আফগানিস্তানের কাবুলে। এপি

বিয়ের আসরে ঘুরে ঘুরে নাচছিল খুদের দল। বড়রা কেউ গল্প করছেন, কেউ বা তদারকি করছেন খাওয়াদাওয়ার। হাজার খানেক মানুষের ভিড়ে গমগম করছিল কাবুলের পশ্চিমে দুবাই সিটি ওয়েডিং হল। সব ছাপিয়ে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। মেঝেতে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে নিথর হয়ে গেলেন কেউ। কারও দেহ আবার কয়েক টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল টেবিলে, চেয়ারের তলায়। শনিবার রাত সাড়ে দশ’টা নাগাদ জমজমাট ওই বিয়েবাড়িতে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হল ৬৩ জনের। আহত অন্তত ২০০। সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিমদের উপরে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।

Advertisement

এই হামলাকে ‘বর্বরোচিত’ বলে বর্ণনা করে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি বলেছেন, ‘‘জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে তালিবানই।’’ যদিও তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দেয় জঙ্গি গোষ্ঠীটি। তাদের নেতা জ়াবিউল্লা মুজাহিদিন সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো একটি বার্তায় বলেছে, ‘‘মহিলা ও শিশুদের লক্ষ্য করে এই রকম নৃশংস হামলার কোনও যুক্তি নেই।’’

২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আইএস প্রবেশের পর থেকে জঙ্গি সংগঠনটি দেশের পূর্ব ও উত্তরে পরিধি বাড়িয়েছে। আফগানিস্তানের পূর্ব প্রান্তের দখল নিয়ে জঙ্গি সংগঠনদুটির লড়াই এখন তুঙ্গে। আমেরিকার সঙ্গে তালিবান শান্তি আলোচনাতেও সম্মতি নেই আইএসের। সংগঠনটি আজ জানিয়েছে, তাদের এক জন সদস্য বিয়েবাড়ির ভিড়ে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষীরা এলে একটি বিস্ফোরক ঠাসা গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে অন্য এক জন। আফগান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, আজই মৃতদেহগুলি সমাহিত করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিরাট একটি হলের ভিতরে চাপ চাপ রক্তের মধ্যে পড়ে রয়েছে মৃতদেহগুলি। গোটা ঘরটি লন্ডভন্ড।

Advertisement

আফগানিস্তানে বিয়েবাড়ি মানেই কয়েক’শো অতিথির সমাগম। কখনও বা হাজারও ছাড়ায়। গত কালও হয়েছিল তাই। বিরাট হলগুলির একদিকে থাকে পুরুষরা। অন্য দিকে মহিলা ও শিশুরা। সদ্য বিবাহিত মিরওয়াইজ বলেন, ‘‘আমার পরিবার, আমার স্ত্রী সবাই আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন।’’ তাঁর আফশোস, ‘‘আমার ভাই, বন্ধু, আত্মীয়রা মারা গিয়েছেন। জীবন আর কখনও কি ভাল থাকতে পারব? সকালেই যাঁদের হাসিমুখ দেখেছিলেন, তাঁরাই এখন নিথর দেহ। আফগানদের এই ভোগান্তি কোনও দিনও শেষ হবে না।’’

নববধূর বাবা জানান, বিস্ফোরণে ১৪ জন আত্মীয়কে হারিয়েছেন তাঁরা। মহম্মদ ফারাগ নামে এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘গোটা হলটি ধোঁয়ায় ভরে যায়। প্রায় মিনিট কুড়ি ওই অবস্থায় ছিল। হলে পুরুষদের দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই নিহত নয়তো আহত।’’ সৈয়দ আগা শাহ নামে এক ওয়েটারের কথায়, ‘‘প্রত্যেকে কাঁদতে কাঁদতে ছুটছিল। চারদিকে রক্ত আর দেহের টুকরো।’’ হলের কাছেই থাকেন তালিব মুজাফ্ফারি। তিনি বলেন, ‘‘সাড়ে ১০টা নাগাদ ভয়াবহ বিস্ফোরণের আওয়াজ পাই। তার পরে সারা রাত শুধু অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন শুনেছি।’’ এই ঘটনার পরে তড়িঘড়ি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট। নভেম্বরেও শহরের একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৫৫ জন।

কাবুলের পশ্চিমাংশে শিয়া মুসলিমরাই সংখ্যায় বেশি। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সংখ্যালঘু শিয়া হাজ়ারা মুসলিম সম্প্রদায় বারবারই তালিবার বা আইএসের মতো সুন্নি জঙ্গি সংগঠনের হামলার শিকার হয়েছে। সম্প্রতি শান্তি চুক্তির সম্ভবনা নিয়ে আলোচনার জন্য তালিবান ও মার্কিন প্রতিনিধিরা কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠকে বসেছিলেন। দু’পক্ষেরই দাবি, তাদের কথাবার্তা বেশ খানিকটা এগিয়েছে। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও টুইট করে সেই ইঙ্গিতই দেন। চুক্তি অনুযায়ী, আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে সেনা সরাবে আমেরিকা। তার বদলে তালিবান নেতৃত্ব কথা দেবে, আফগান ভূখণ্ড আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার করবে না। তবে যত দিন না মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে, তত দিন আফগান সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছে তালিবান। থামেনি জঙ্গি হামলাও। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘এই ভয়াবহ হামলার জন্য যে জঙ্গিরা দায়ী এবং সেই জঙ্গিদের যারা আশ্রয় দিচ্ছে তাদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন