(উপরে) ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই (নীচে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইজ়রায়েল ইতিমধ্যে যা করে দিয়েছে, তাতে ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির স্বপ্ন অন্তত দু’বছরের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে! এমনটাই মনে করছে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন। জার্মান সংবাদপত্র ‘বিল্ড’কে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদন সার।
ইরানের কাছে যে এখনও পরমাণু বোমা নেই, তা আগেই একপ্রকার মেনে নিয়েছে ইজ়রায়েল। তবে তাদের সন্দেহ, পরমাণু বোমা তৈরির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে ইরান। শীঘ্রই ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলতে পারে বলে সন্দেহ করছে নেতানিয়াহুর সরকার। সেই আশঙ্কা থেকেই ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইজ়রায়েলি বাহিনী। জার্মান সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী বলেন, “যা খবর পাচ্ছি তাতে, ওদের (ইরানের) পরমাণু বোমা তৈরির সম্ভাবনাকে আমরা ইতিমধ্যে অন্তত দুই-তিন বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছি।”
আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইরানের বিরুদ্ধে। যদিও ইরান বরাবর দাবি করে এসেছে, তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ কাজের জন্যই পারমাণবিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সম্প্রতি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “ভাবুন যদি ইরানের হাতে পরমাণু বোমা থাকত, তবে কী হতে পারত!”
সাধারণ ভাবে ৪২ কেজি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের মাধ্যমে একটি পরমাণু বোমা তৈরি করা সম্ভব। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরান প্রায় ২৭৫ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরির কাজে সফল হয়েছে। আর এই নিয়েই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
যদিও আমেরিকার গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান এখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরির ধারেকাছে এসে পৌঁছোয়নি। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, প্রস্তুতি শুরু করলেও ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে মোটের উপর আরও তিন বছর দেরি। বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনই উল্লেখ করা হয়েছে।
আমেরিকার গোয়েন্দারা মনে করছেন, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে ইজ়রায়েলের হামলার ফলে তেহরানের পারমাণবিক গবেষণার কাজ কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। এর থেকে বেশি ইরানের কাজে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমেরিকার গোয়েন্দাদের দাবি, নাতানজ়ে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে ইজ়রায়েল। কিন্তু, ফরদোতে যে কেন্দ্র রয়েছে, তাতে আঁচড় কাটতে পারেনি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনা।
মার্কিন প্রাক্তন কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক সিএনএন-কে জানিয়েছেন, আমেরিকার সাহায্য তথা অস্ত্র ছাড়া ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই ইজ়রায়েলের। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ইজ়রায়েল চাইছে আমেরিকা তাদের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ জিবিইউ-৫৭ বোমা দিয়ে হামলা চালাক ইরানের উপর। তবে এই নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।