আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ৮৬ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের তরফে এপস্টিন ফাইলের কিছু অংশ প্রকাশের জন্য আবেদন জানানো হল নিউ ইয়র্কের আদালতে। ওই ফাইল নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প প্রশাসন অস্বস্তিতে। অভিযোগ, একসময় এপস্টিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ট্রাম্প। এপস্টিনের ফাইলে তাঁর নাম রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কও। আমেরিকায় নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার পর মাস্ক জানিয়েছিলেন, এপস্টিন ফাইল প্রকাশ্যে আনার ব্যবস্থা করাই তাঁর আমেরিকা পার্টির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ নিয়ে টানাপড়েন চলছিলই। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন দৈনিক এই সংক্রান্ত একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে। তার পরেই নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন প্রশাসন।
অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিকে বৃহস্পতিবারই এপস্টিন ফাইল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এপস্টিনের ‘সিক্রেটিভ গ্র্যান্ড জুরি টেস্টিমনি’-র অংশ প্রকাশ করতে বলেছিলেন তিনি। মার্কিন প্রশাসনের বিচার বিভাগ (জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট) শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে আদালতে তার আবেদন জানিয়েছে নিউ ইয়র্কের এক বিচারকের কাছে। ২০১৯ সালে এপস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন পাচার মামলায় জড়িত গ্র্যান্ড জুরির প্রতিলিপি সম্পর্কিত ফাইলের প্রকাশ চেয়েছেন ট্রাম্প। সাধারণ ভাবে যা গোপন রাখা হয়। এগুলি আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া, এপস্টিনের সঙ্গী গিজ়লাইন ম্যাক্সওয়েলের মামলাটিও প্রকাশ করতে বলেছেন ট্রাম্প। তিনিও শিশু পাচারের চক্রান্তে জড়িত ছিলেন।
আমেরিকায় গ্র্যান্ড জুরি হল সেই প্যানেল, যা যাচাই করে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ আছে কি না। এই প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই গোপন সাক্ষ্য নেওয়া হয়ে থাকে এবং সাক্ষীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। গ্র্যান্ড জুরির তথ্য মার্কিন আইন দ্বারা সুরক্ষিত। সাধারণ ভাবে তা প্রকাশ্যে আনা যায় না। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে আদালত সেই তথ্য প্রকাশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন সেই আবেদন জানিয়েছে। আদৌ এপস্টিন ফাইল প্রকাশ্যে আসবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে দাবি, এপস্টিনকে নগ্ন মহিলার ছবি এঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০০৩ সালে এপস্টিনের ৫০তম জন্মদিনে চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি। টাইপরাইটারের মাধ্যমে লেখা শুভেচ্ছাবার্তায় বলা হয়েছিল, “শুভ জন্মদিন। তোমার প্রতিটা দিন যেন ভিন্ন অথচ দুর্দান্ত ভাবে গোপন হয়ে ওঠে।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিতে এক নগ্ন মহিলার ছবি এঁকেছিলেন ট্রাম্প। নীচে কেবল ডোনাল্ড শব্দটি লিখে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই বলেছিলেন, ‘‘আমি জীবনে কোনও দিন ছবি আঁকিনি। মেয়েদের ছবি তো আঁকিইনি। এগুলো আমার ভাষা বা শব্দই নয়।’’ তার পরে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ট্রাম্প যাকে ‘ভুয়ো এবং মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ডো জোন্স এবং রুপার্ট মার্ডকের বিরুদ্ধে শুক্রবার মানহানির মামলা করেছেন ট্রাম্প। দাবি করেছেন এক হাজার কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৮৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ট্রাম্পের দাবি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই প্রতিবেদনে তাঁর নামে অপপ্রচার করা হয়েছে। তাতে মানহানির আইন লঙ্ঘিত হয়েছে।