দক্ষিণ আফ্রিকার জোয়ার্টওয়াটার। সন্ধেবেলা ঘরের মধ্যে মেয়ের জন্য রান্না তৈরি করছিলেন মা। হঠাৎ তার মেয়ের এক বান্ধবী দৌড়ে এসে খবর দেন যে তিনজন অপরিচিত দুষ্কৃতী তুলে নিয়ে গেছে তার মেয়েকে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে, বাড়িতে সবজি কাটার ছুরি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় দু'মাইল দৌড়ে ওই বান্ধবীর দেখিয়ে দেওয়া বাড়ির কাছে পৌঁছতেই শুনতে পান নিজের মেয়ের আর্তচিৎকার।
সঙ্গে সঙ্গে দরজা ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়লে তিনি দেখেন তিনজন পুরুষ তার মেয়েকে ধর্ষণ করতে উদ্যত। সেই অবস্থায় নিজের মেয়েকে বাঁচাতে এলোপাথাড়ি ছুরি চালাতে শুরু করেন সেই মা। সজোরে চালানো সেই ছুরির এক দুষ্কৃতীর তখনই মৃত্যু হয়; গুরুতর আহত হয় বাকি দুজন।
সেই তিন দুষ্কৃতীর নাম জোলিসা সিয়েকা, এমসেদিসি ভুবা এবং জামিলা সিয়েকা বলে জানানো হয়েছে। তাঁর ছুরির আঘাতে ঘটনাস্থলেই জামিলা সিয়েকা মারা যান। সন্তানকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার অসাধারণ নিদর্শন রাখা এই মহিলাকে তার অসীম সাহসের জন্য ডাকা হতে থাকে 'লায়ান মামা' বা 'সিংহের মত মা' বলে।
আরও পড়ুন: ২১ মাস পর মরণাপন্ন সন্তানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলেন ইয়েমেনের মহিলা
কিন্তু পুলিশের তরফে সেই মহিলাকেই এক ব্যক্তিকে খুন এবং দুই ব্যক্তিকে আঘাত করার অপরাধে সাজা দেওয়া হয়। তবে এই ঘটনাটি জানাজানি হতেই রুখে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ। প্রায় ১০০০০ পাউন্ডের (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ লক্ষ টাকা) ফান্ড তোলা হয় তার আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য।
অবশেষে এক বছর বিচার চলার পর দুই জীবিত দুষ্কৃতীকেই অপরাধী ঘোষণা করেছে আদালত। দুই অপরাধীকেই ৩০ বছর কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্ধ হচ্ছে ‘ট্রাম্প ফাউন্ডেশন’
আইনি কারণ দেখিয়ে নাম প্রকাশ করা হয়নি সাতান্ন বছর বয়সী ওই মহিলার। তবে সন্তানকে রক্ষা করতে 'লায়ান মামা'র এই অবতার প্রশংসা পেয়েছে বিশ্ব জুড়েই। অপরাধীরা সাজা পাওয়ায় তিনি যে খুশি, তা জানিয়েছেন 'লায়ন মামা'। তার নিজের সন্তানও যদি এইরকম কোন অপরাধ করতেন, তবে এভাবেই তিনি রুখে দাঁড়াতেন বলে জানিয়েছেন তিনি।