ওমরানের এই ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি: এএফপি।
ধুলোয় ঢাকা খালি পা দু’টো চেয়ারের সামনে ছড়ানো। অ্যাম্বুল্যান্সের কমলা চেয়ারটা বছর পাঁচেকের খুদে শরীরের তুলনায় অনেকটাই বড়। কপাল থেকে গড়িয়ে নামা রক্ত ঢেকে দিয়েছে মুখের একটা দিক। চুলের উপরেও পুরু ধুলোর চাদর। সদ্য মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার আতঙ্ক ছায়া ফেলেছে চোখে-মুখে।
আলান কুর্দির পরে ওমরান দাকনিশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় নতুন মুখ!
বুধবার রাতে রুশ বিমান হানায় ভেঙে পড়ে ওমরানদের বাড়ি। ধ্বসংস্তূপের তলা থেকে তাকে বার করে আনেন উদ্ধারকারীরা। তার পর অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তখনই তোলা হয়েছিল ভিডিওটি। সিরিয়ার সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা সেই ভিডিও ইন্টারনেটে পোস্ট করার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। ঠিক যেমন হয়েছিল সিরিয়ার আর এক শিশু, আলান কুর্দির ছবিও।
ওমরান এ যাত্রায় রক্ষা পেলেও মৃত্যু রেয়াত করেনি আলানকে। সিরিয়া ছেড়ে পালাতে গিয়ে শরণার্থী বোঝাই নৌকা উল্টে ডুবে গিয়েছিল বছর তিনেকের আলান কুর্দি। তারপর তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে তার দেহ ভেসে ওঠে। সৈকতে পড়ে থাকা আলানের সেই ছবি স্মৃতি থেকে ধুয়ে যাওয়ার আগেই ভেসে উঠল আরও একটি অসহায় শিশুর রক্তাক্ত মুখ।
আরও পড়ুন
হাত ফস্কে সমুদ্রে পড়ে গেল বাচ্চা দু’টো! হাহাকার বাবার
ওমরানদের বাড়ি আলেপ্পোর কাতেরজি জেলায়। সিরিয়ার অন্যতম বড় শহর আলেপ্পো এক সময় দেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। ২০১১ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে বাকি সিরিয়ার মতোই গুঁড়িয়ে গিয়েছে শহরটি।
বৃহস্পতিবার ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে আলেপ্পো মিডিয়া সেন্টার নামে সিরিয়ার একটি সরকার বিরোধী সংগঠন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে ওমরানকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনের আসনে বসানো হচ্ছে। তার কপাল ভেসে যাচ্ছে রক্তে। কিছুটা যেন হতবাক হয়ে বসে আছে পাঁচ বছরের খুদে। কয়েক সেকেন্ড পরে হাত বুলিয়ে মাথা থেকে রক্ত মোছার চেষ্টা করল সে। হাতে লাগা রক্তের দিকে তাকিয়ে রইল কিছু ক্ষণ। তার পর রক্তমাখা হাতটা অ্যাম্বুল্যান্সের সিটে মুছে ফেলল। পরে তার পাশে এনে বসানো হয় আরও দু’টি আহত শিশুকে।
ভিডিওটি তোলেন মহম্মদ রাসলান নামে এক চিত্র সাংবাদিক। বিমান হানার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাসলান-সহ কয়েক জন সাংবাদিক। উদ্ধার কাজে হাত লাগান তাঁরাও। রাসলান জানান, ধ্বংস্তূপের তলা থেকে প্রথমেই উদ্ধার করা হয় ওমরান, তার বাবা ও তার তিন বোনকে। রাসলানের কথায়, ‘‘আমরা একের পর এক আহতকে ধ্বংসস্তূপ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ছোটদের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেওয়া হয়। তবে ওমরানের মায়ের গোড়ালি কংক্রিটের চাঁইয়ে আটকে গিয়েছিল বলে তাঁকে বার করতে একটু সময় লেগেছিল।’’
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় চোট লাগে ওমরানের। সে দিন রাতেই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবারের বিমানহানায় আহত হয় আরও ১২টি শিশু। তাদের সকলেরই বয়স পনেরোর নীচে।
দেখুন সেই ভিডিও