London

Mind The Gap: মার্গারেটের অমর প্রেম! প্রয়াত স্বামীর কণ্ঠে ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’ ফিরল লন্ডন টিউবে

৪০ বছর আগে ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’ ঘোষণাটি রেকর্ড করেছিলেন অসওয়াল্ড লরেন্স। সম্প্রতি সেই কণ্ঠস্বর সরিয়ে যান্ত্রিক আওয়াজ আনেন সাবওয়ে কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ১২:৪৯
Share:

এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে মার্গারেট ম্যাকলাম। টুইটার থেকে নেওয়া।

লাঠি ঠুকঠুকিয়ে লন্ডনের এমব্যাঙ্কমেন্ট টিউব (লন্ডনের পাতালরেল) স্টেশনে এসে রোজ বসে থাকেন বছর পঁয়ষট্টির মার্গারেট ম্যাকলাম। প্রতিদিন কান পেতে শোনেন একটিই ঘোষণা, ‘‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ।’’ আকুল হয়ে শোনেন। শুনতেই থাকেন। প্রতিদিন। রোজ।

আসলে সেই কণ্ঠে খোঁজেন তাঁর প্রয়াত স্বামীকে। চার দশক আগে রেকর্ড করা সেই ঘোষণায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন অধুনাপ্রয়াত অসওয়াল্ড লরেন্স। মার্গারেটের স্বামী। যিনি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন ২০০৭ সালে। কিন্তু স্বামীর কণ্ঠস্বর সঙ্গ ছাড়েনি মার্গারেটের। রোজ তিনি যেতেন এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে। শুধু অসওয়াল্ডের ‘ব্যারিটোন’ কণ্ঠ শুনতে।

Advertisement

মার্গারেটের বাড়ির কাছেই এমব্যাঙ্কমেন্ট টিউব স্টেশন গিয়ে নিত্য স্বামীর স্বর শোনা যাপনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল মার্গারেটের। স্বামীর গুরুগম্ভীর গলায় যখন বাজত, ‘‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’’, তখন অজস্র স্মৃতি ভিড় করত পঁয়ষট্টি বসন্ত অতিবাহিত-করা মার্গারেটের।

লন্ডন টিউবে যাত্রী সাধারণকে সতর্ক করতে চালু হয়েছিল ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’ ঘোষণা। ৪০ বছর আগে উত্তর লন্ডনের টিউব পরিষেবার জন্য ঘোষণাটি রেকর্ড করেছিলেন মঞ্চাভিনেতা অসওয়াল্ড। ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের মাঝে যে ফাঁক (গ্যাপ) থাকে, উঠতে-নামতে গিয়ে সে সম্পর্কে যাতে সতর্ক থাকেন যাত্রীরা, সেই কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই উত্তর লন্ডনের টিউবে নিত্য বাজত অসওয়াল্ডের কণ্ঠ। যে ঘোষণা ক্রমে কালোত্তীর্ণ হল। পরিণত হল লন্ডন শহরের অভিজ্ঞানে। ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহরে ঘুরতে-যাওয়া পর্যটকদের জন্য স্মরণিকা হিসাবে কিনতে-চাওয়া টি-শার্টে, কফি মাগে, চাবির রিংয়ে— সর্বত্র লেখা হতে থাকল ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’।

Advertisement

লন্ডন ঘুরতে-যাওয়া পর্যটকদের জন্য স্মরণিকা হিসাবে কিনতে-চাওয়া টি-শার্টে, কফি মাগে, চাবির রিংয়ে— সর্বত্র লেখা হতে থাকল ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’। টুইটার থেকে নেওয়া।

যাত্রী সাধারণের কাছে যা সতর্কবাণী, বিদেশিদের কাছে যা কুড়িয়ে-নেওয়া লন্ডনভ্রমণের অভিজ্ঞান, অসওয়াল্ডের স্ত্রী মার্গারেটের কাছে তা ছিল ফিরে পাওয়া প্রেম আর যৌবনের উচ্ছ্বাস। ছিল স্মৃতির সরণিতে অবিরল হাঁটতে-থাকা। প্রয়াত স্বামীর গলাটা শুনতে তাই রোজ এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে গিয়ে ঠায় বসে থাকতেন মার্গারেট। ট্রেনের অপেক্ষায়! ট্রেন এলে কথা বলে উঠবেন অসওয়াল্ড!

কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে রোজকার মতো টিউব স্টেশনে গিয়ে বসলেও মার্গারেটের শুনতে পাননি অসওয়াল্ডের কণ্ঠস্বর। কী হল! তড়িঘড়ি কারণ জানতে বৃদ্ধা মার্গারেট ছুটেছিলেন টিউব কর্তৃপক্ষের কাছে। জানতে পারেন, সময়ের দাবি মেনে ঘোষণায় এসেছে ‘ডিজিটাল কণ্ঠ’। তামাদি হয়ে গিয়েছে অসওয়াল্ডের কণ্ঠে জগৎবিশ্রুত সেই তিনটি শব্দ— ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ।’

মুষড়ে পড়েন মার্গারেট। অস্ফুটে শুধু টিউব কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন, স্বামীর ঘোষণার কোনও রেকর্ডিংয়ের ক্যাসেট যদি পাওয়া যায়! জানিয়েছিলেন, বছরের পর বছর ধরে শুধু প্রয়াত স্বামীর গলা শুনতেই প্রতিদিন টিউব স্টেশনে এসে বসে থাকেন তিনি ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’ তাঁর কাছে নিছক ঘোষণা নয়। তা হল ফিরে পাওয়া প্রেম!

মার্গারেটের আকুতি ভাবাতে থাকে টিউব কর্তৃপক্ষকে। শেষমেশ মার্গারেটকে তাঁরা অসওয়াল্ডের ঘোষণার একটি সিডি দেন। এবং পাশাপাশিই নেন অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত— মার্গারেট যে এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে নিত্য স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনতে যেতেন, সেখানে শুধু মার্গারেটের জন্যই বাজানো হবে ৪০ বছর আগে রেকর্ড করা অসওয়াল্ডের সেই গম্ভীর কণ্ঠস্বর। মার্গারেটের সঙ্গেই তা শুনবেন এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশন দিয়ে যাতায়াত-করা লক্ষ লক্ষ মানুষ।

‘গ্যাপ’ রইল না আর। ফাঁক ভরাট হল অসওয়াল্ড-মার্গারেটের। স্বীকৃতি পেল প্রয়াত স্বামীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য একাকিনী স্ত্রী-র আকুতি। ভাগ্যিস লন্ডন টিউব কর্তৃপক্ষ বুঝেছিলেন প্রেমের যাত্রায় সেই ফাঁকটুকু! ভাগ্যিস তাঁরাও অনুধাবন করেছিলেন সতর্কবাণী— ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন