সৌজন্য: মায়ানমারের জননেত্রী তথা সরকারি উপদেষ্টা আউং সান সু চি-র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার নেপিদও-এর প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে নৈশভোজের আসরে। ছবি: এপি।
ব্রিকস সম্মেলন সেরে মায়ানমারে পা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ রাতে সে দেশের রাষ্ট্রপতি হিতিন কওয়াইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আগামিকাল বৈঠক হওয়ার কথা ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী আউং সান সু চি-র সঙ্গে। চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে মায়ানমারের দিশা ভারতের দিকে ঘোরানো ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সু চি-এর সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত
অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে তৎপরতা শুরু করেছে। সেই পরিস্থিতিতে ওই বৈঠকটি বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে বলে মনে করছে
সাউথ ব্লক।
বর্তমানে গোটা দেশে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। যাঁরা প্রত্যেকেই এসেছেন অবৈধ ভাবে, সীমান্ত টপকে। এই শরণার্থীদের কারণে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্র। যে ভাবে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে শুরু
আরও পড়ুন: পঞ্চশীলে আস্থা রেখে শান্তি চায় চিন
করেছেন তাতে খুশি নয় সঙ্ঘ পরিবারও। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সংসদে জানান, রোহিঙ্গাদের ফের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আজ এ বিষয়টির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যগুলিতে কী সংখ্যায় রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রতিটি রাজ্যকে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে বলা হয়েছে। চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হলে ওই অনুপ্রবেশকারীদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাবে ভারত।’’
যদিও মায়ানমারের শাসক দল শুরু থেকেই শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার প্রশ্নে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে। মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে আসা ওই অনুপ্রবেশকারীদের নিতে রাজি নয় ঢাকাও। এই পরিস্থিতিতে মায়ানমার সরকারের নেপথ্য শক্তি সু চি-র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে এ বিষয়ে কী আলোচনা হয়, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। রোহিঙ্গা প্রশ্নে নয়াদিল্লি মায়ানমারের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। পাশাপাশি চিনকে বার্তা দিতে গতকাল এনএসসিএন (খাপলাঙ) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এক যোগে হামলা চালায় ভারত ও মায়ানমারের সেনা। সাউথ ব্লকের ব্যাখ্যা, চিন সে দেশের নতুন সরকারের পাশে থাকার জন্য পরিকাঠামোগত লগ্নি করা শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশে চিনের লগ্নির কারণে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে ভারতের। তাই গতকাল যৌথ অভিযান চালিয়ে নয়াদিল্লি বোঝাতে চেয়েছে জঙ্গি দমনের প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে মায়ানমারের সরকারের সমঝোতায় কোনও সমস্যা নেই।
ভারত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। আজ সেই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কিরেণ রিজিজু। তাঁর কথায়, ‘‘ঐতিহাসিক ভাবে ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তাছাড়া আমরা ওই শরণার্থীদের মাঝ সমুদ্রে গিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেব না বা সীমান্তে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারব না। আমরা নিয়ম মেনেই ওই অনুপ্রবেশকারীদের তাঁদের দেশে পাঠাব।’’