শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবচিত্র। ছবি: রয়টার্স।
জোড়া ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধস— মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হল দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং তাইল্যান্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ১,০০০-এরও বেশি মানুষ। প্রায় একই পরিস্থিতি মালয়েশিয়াতেও।
গত সপ্তাহেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার। তার কয়েক দিনের মাথায় ফের তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড় দিটওয়া। এই দুইয়ের জেরে সাগর সংলগ্ন একাধিক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় দিটওয়ার তাণ্ডবে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৩৪ জনের। প্রায় ৪০০ জন এখনও নিখোঁজ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যান্ডি শহর। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৮৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজ অন্তত ১৫০ জন। এ ছাড়া, বাদুল্লায় ৭১ জন, নুওয়ারা এলিয়ায় ৬৮ জন এবং মাতালেতে ২৩ জন মারা গিয়েছেন। সারা দেশের ৩০৯, ৬০৭টি পরিবারের মোট ১১,১৮,৯২৯ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, যার ফলে আরও ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।
ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ারের দাপট এবং পরবর্তী বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইন্দোনেশিয়াতেও। ইতিমধ্যেই সে দেশে ৪৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানকার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা (বিএনপিবি) জানিয়েছে, সুমাত্রার তিনটি প্রদেশ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে উত্তর সুমাত্রায়। সেখানে মারা গিয়েছেন ২১৭ জন, অন্তত ২০৯ জন এখনও নিখোঁজ। আচেহ প্রদেশে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ ৭৫ জন। ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে পশ্চিম সুমাত্রায়। সেখানেও ১১৮ জন নিখোঁজ। এ ছাড়া, বন্যায় দেশের মোট ৩৫ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার আর এক দেশ তাইল্যান্ডের অবস্থাও শোচনীয়। সেখানে বন্যায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। দক্ষিণ তাইল্যান্ডে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৭০ ছাড়িয়েছে। এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। সে দেশের সরকারি মুখপাত্র সিরিপং আংকাসাকুলকিয়াত জানিয়েছেন, দক্ষিণের আটটি প্রদেশ কার্যত লন্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোংখলা। সেখানে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক দু’টি ঘূর্ণিঝড়ই তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। দিটওয়ার দাপটে টানা কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে গ্রাম এবং শহর। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ত্রাণ পাঠানোর পাশাপাশি সে দেশে আটকে পড়া তিনশো ভারতীয়কে উদ্ধার করে বিমানে চাপিয়ে দেশে ফেরানো হয়েছে। ভারতের তামিলনাড়ু, পুদুচেরী এবং দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলেও বৃষ্টি চলছে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে।