nasa

James Webb Telescope: প্রতীক্ষার পরে এ বার মহাশূন্যের বিগ সায়েন্স

Advertisement

পথিক গুহ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১০
Share:

‘জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ’-এর আয়না। নাসার প্রকাশিত ছবি।

২৫ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। আগামী কাল ভারতীয় সময় সন্ধে ছ’টায় (আমেরিকায় তখন সকাল সাড়ে সাতটা) এরিয়ন-৫ রকেটে চড়ে আকাশে উড়ে যাবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির হাজার কোটি ডলারের বিগ সায়েন্স। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের তাই বুক ঢিপঢিপ। আগে কখনও এত বিপজ্জনক, এত বড় প্রকল্পে নামেননি ওঁরা।

Advertisement

হ্যাঁ, সত্যিই এক গন্ধমাদন প্রকল্প ওই টেলিস্কোপ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি যার খরচ ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ২০ কোটি ডলার, তা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১০০০ কোটি ডলার! ২০১০ সালে ‘নেচার’ পত্রিকায় ওই দূরবিন নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘দ্য টেলিস্কোপ দ্যাট এট অ্যাস্ট্রোনমি’। খেয়ে ফেলারই দশা! নাসার সাদা হাতি ওই দূরবিন বানাতে এত খরচ হয়েছে যে ওই সংস্থার পক্ষে বিশ্বতত্ত্বের অন্য অন্য অনুসন্ধান হাতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভাগ্যিস অর্থসাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। না হলে গঙ্গাপ্রাপ্তি হত এই টেলিস্কোপের।

চোদ্দোটা দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অধীর অপেক্ষায়। তাঁরা অনেক প্রশ্নের উত্তর চান। কী কী প্রশ্ন? মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে, ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাবিস্ফোরণে ১৩৮০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পর এখন যা যা আছে— গ্যালাক্সি, গ্রহ-তারা, এমনকি মানুষ পর্যন্ত, এ সব কী করে এল? জন ক্রমওয়েল ম্যাথার, নোবেলজয়ী জ্যোতিঃপদার্থবিদ, যিনি এই টেলিস্কোপের প্রধান বিজ্ঞানী, তিনি বলেছেন, ‘‘২৯ দিন পরে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পৌঁছবে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। ওখান থেকে পাঠাবে তথ্য। সে তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পারব ‘বিগ ব্যাং’-এর দশ কোটি বছর পরে প্রথম নক্ষত্রগুলোর আলো কেমন ছিল।’’

Advertisement

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা প্রিয়ংবদা নটরাজনের জ্ঞাতব্য বিষয় আবার অন্য। তিনি জানতে চান, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে সুপারম্যাসিভ (সূর্যের চেয়ে কোটি কোটি গুণ ভারী) ব্ল্যাক হোল তৈরি হল কী ভাবে।

যাঁরা ‘সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা ভিন্গ্রহে প্রাণ নিয়ে কাজ করেন, সে সব বিজ্ঞানীরা খোঁজ করবেন অন্য নক্ষত্র-প্রদক্ষিণকারী পৃথিবীর মতো গ্রহের। সে গ্রহের পিছনে যখন পড়ে থাকবে নক্ষত্রটি তখন টের পাওয়া যাবে সে গ্রহের আবহাওয়া। আবহাওয়ায় অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড কিংবা মিথেনের মতো গ্যাস থাকলে বলা যাবে, ওখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

প্রায় সব খবর জানা যাবে আলো মারফত। ব্রহ্মাণ্ড ফুলেফেঁপে বাড়ছে। ফলে যে আলো ছিল নীল তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে তা এখন হয়েছে লালেরও উপরে— ইনফ্রারেড। সে আলো শনাক্ত করতে ওই টেলিস্কোপে রয়েছে সাড়ে ছ’মিটার ব্যাসের আয়না। একটা গোটা আয়না নয় (অত বড় আয়না-সমেত টেলিস্কোপকে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে পারত না কোনও রকেট) ১৮টি সুষম ষড়ভূজাকৃতি আয়নার সমষ্টি। কোনও কোনও ফুল যেমন রাতের বেলা পাপড়ি মেলে ফোটে, তেমনই ওই ১৮টি আয়নাও এক সঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়াবে টেলিস্কোপ মহাশূন্যে যাওয়ার পরে। ইনফ্রারেড আলো মানে সামান্য তাপ। ওই সামান্য তাপ শনাক্ত করতে টেলিস্কোপকে রাখতে হবে মাইনাস ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ জন্য টেলিস্কোপের যে দিকে থাকবে সূর্য, পৃথিবী বা চাঁদ, সে দিকটা ঢাকা থাকবে পর পর পাঁচটা পর্দা দিয়ে। এক একটা পর্দার আয়তন একটা টেনিস কোর্টের সমান।

নামে আপত্তি অনেক বিজ্ঞানীর। জেমস ওয়েব ছিলেন নাসার স্বর্ণযুগের প্রধান। যে যুগের অ্যাপোলো প্রোগ্রাম, যার পরিণতি মানুষের চাঁদে পা। মানুষটা হ্যারল্ড এস ট্রুম্যান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন অনেককে অত্যাচার করেছিলেন। বিশেষত সমকামীদের। তার বদলে কোনও বিজ্ঞানীর নাম কি যুক্ত হতে পারত না টেলিস্কোপের সঙ্গে? যেমন, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (জ্যোর্তিবিজ্ঞানী এডুইন পাওয়েল হাবল-এর নামে) কিংবা হয়তো আইনস্টাইন এক্স-রে অবজ়ার্ভেটরি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন