মাসুদকে নিয়ে আমেরিকার নয়া প্রস্তাব তৈরি হয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সক্রিয় সহযোগিতায়।— ফাইল চিত্র।
আভাস আগেই ছিল। এ বার মাসুদ আজহারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে কঠোর পদক্ষেপ করল হোয়াইট হাউস। এ বিষয় নতুন প্রস্তাবের খসড়া রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের কাছে আনল তারা। আমেরিকার এই নয়া প্রস্তাব তৈরি হয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্সেরসক্রিয় সহযোগিতায়।
আমেরিকার আনা এই নয়া প্রস্তাবেই জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের সম্পত্তির বাজেয়াপ্ত করা, তার গতিবিধির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং তাকে নিরস্ত্র করার কথাও বলা হয়েছে। রাখা হয়েছে অন্যান্য কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রস্তাবও। বুধবারই রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলির সম্মতির জন্য এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।
মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণা করার রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে বার বার বাধা দিয়েছে চিন। বারবার তাদের এমন আচরণে হতাশা প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনও। চিনের এ রকম মনোভাবের পরই পশ্চিমি কূটনৈতিক মহল স্পষ্ট করে মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করতে আর চিনের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয়। বরং বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা চায় তারা। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছিল আমেরিকা।
আরও পড়ুন: নীরব কাণ্ড: লন্ডন গেল ইডি-সিবিআইয়ের দল
আরও পড়ুন: মহাকাশে সাফল্য ভারতের, মোদীকে ‘নাট্য দিবসে’র শুভেচ্ছা জানিয়ে খোঁচা রাহুলের
মাসুদকে নিয়ে চিন অবস্থান না পাল্টালে, রাষ্ট্রপুঞ্জের বাকি স্থায়ী সদস্য দেশগুলি তাকে টপকে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কূটনীতিক। ১৯৯৯ সালে ওসামা বিন লাদেন, তার সহযোগী এবং তালিবানদের নিষিদ্ধ করতে ১২৬৭ নং ধারায় সর্বসম্মতিক্রমে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। যার আওতায়, ওসামা, আলকায়দা এবং তালিবান নেতা, তাদের সহযোগী এবং শাখা সংগঠনগুলিকে বিশ্বের সর্বত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রয়োজনে চিনের ভেটো অগ্রাহ্য করে মাসুদের ক্ষেত্রেও সেই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওই মার্কিন কূটনীতিবিদ। শুধু আমেরিকা নয়, দিন কয়েক আগেই মাসুদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ফ্রান্সও। ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, সে দেশে মাসুদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবে তারা। পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশকেও এই আর্জি জানিয়েছিল ফরাসি প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর মাসুদ আজহারকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয় নয়াদিল্লি। এই প্রশ্নে ভারতের পাশে ছিল আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। কিন্তু ফের চিনের প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে আটকে যায় সেই উদ্যোগ। মাসুদকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রস্তাবে ভেটো দেয় চিন। এর পরই গোটা ঘটনাকে ‘হতাশজনক’ বলে মন্তব্য করেছে নয়াদিল্লির বিদেশ মন্ত্রক। এ দিনের মার্কিন পদক্ষেপে ভারতের হাত আরও শক্ত হল, তা বলাই যায়।
ভারতে জঙ্গি সন্ত্রাস নিয়ে এই তথ্যগুলি জানতেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মাসুদ আজহারকে কালো তালিকায় আনার চেষ্টা প্রথম নয়। গত দশ বছর ধরেই ভারত সরকার বিষয়টির জন্য সওয়াল করে আসছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে। প্রত্যেক বারই হোঁচট খেতে হচ্ছে বেজিংয়ের আপত্তিতে। পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে নয়াদিল্লির অতিসক্রিয় কূটনীতির ফলে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে মাসুদের ভূমিকা সামনে চলে আসায় প্রধানত আমেরিকা উঠে পড়ে লেগেছিল। সেইসঙ্গে সক্রিয় হয়েছিল পশ্চিমী বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলিও। তবে এ হেন চাপের মধ্যেও যে একেবারে দায়ে না পড়লে ‘সব ঋতুর মিত্র’ পাকিস্তানকে কোনও অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না চিন, প্রস্তাব পেশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও তার ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা। সেই মতোই মাসুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাবে ভেটোও দেয় বেজিং।
(সারা বিশ্বের সেরা সব খবর বাংলায় পড়তে চোখ রাখতে পড়ুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)