অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিশ্বাস যে ভাবে ভেঙেছিলেন, এ বার নরেন্দ্র মোদীকেও সে ভাবেই হতাশ করবেন নওয়াজ? —ফাইল চিত্র।
এ বার একেবারে ‘স্ট্রেট ব্যাটে’ পাকিস্তানকে জোরালো জবাব দিল ভারত! কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে ১৯ জুলাই দিনটিকে ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালনের যে ডাক দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, তার প্রতিবাদে।
শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের (ভারত) অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান যে ভাবে লাগাতার নাক গলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাতে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের জঙ্গিদের নানা ভাবে প্রশংসা করা হচ্ছে। উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। যার থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ওই সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি পাকিস্তানের এখনও সহানুভূতি রয়েছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
পর পর দু’-দু’টো ঘটনা। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে প্রথমে ১৯ জুলাই দিনটিকে ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালনের ডাক দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার পর আজ সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় নানা রকমের উস্কানি। একের পর এক উস্কানিমূলক ছবি টুইট করতে শুরু করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাওয়াজা এম আসিফ। যেখানে কাশ্মীরের চলতি সপ্তাহের ঘটনাকে ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সঙ্গে তুলনা করা হয়। তাঁর টুইটারে ওই সব উস্কানিমূলক ছবি পোস্ট করে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘গুজরাতে মোদী (নরেন্দ্র মোদী) ২০০২ সালে যে জাতিবিদ্বেষের বীজ পুঁতেছিলেন, কাশ্মীরের এ সপ্তাহের ঘটনা তারই পুনরাবৃত্তি আর তার পরিবর্ধনও বটে।’’
গত কয়েক দিন ধরেই কাশ্মীর ইস্যুতে চূড়ান্ত প্ররোচনামূলক আচরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে পাকিস্তান। লাহৌরে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শুক্রবার ঘোষণা করলেন, কাশ্মীরের এই সংগ্রামকে পাকিস্তান স্বাধীনতার সংগ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। কাশ্মীরিদের আন্দোলনের প্রতি সংহতির বার্তা দিতে ১৯ জুলাই ‘কালা দিবস’ পালনের কথা ঘোষণা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এ কাশ্মীরকে সব রকম ভাবে সাহায্য করা হবে বলেও পাক প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার জানিয়েছেন।
পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শুক্রবার নিজের শহর লাহৌরে ছিলেন। রাজধানী ইসলামাবাদে ছিলেন না। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যু আচমকা পাকিস্তানের কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, শুক্রবার লাহৌরেই নওয়াজ ক্যাবিনেটের বিশেষ বৈঠক ডাকেন। লাহৌর গভর্নর হাউজে হওয়া সেই বৈঠকে পাকিস্তানের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯ জুলাই গোটা পাকিস্তান কাশ্মীরের সমর্থনে ‘কালা দিবস’ পালন করবে। বৈঠকে নওয়াজ বলেন, ‘‘কাশ্মীরিদের এই সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তান কাশ্মীরিদের সব রকম নৈতিক, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমর্থন দেবে।’’ কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের উভয় সভার যৌথ অধিবেশন ডাকা হবে বলেও ক্যাবিনেটের বিশেষ বৈঠকে স্থির হয়েছে।
নওয়াজ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘ভারতের বর্বরতা কাশ্মীরিদের আন্দোলনকে আরও তীব্র করবে।’’ উপত্যকায় ভারত সরকার যে ৭ লক্ষ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে, তা কাশ্মীরিদের আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না বলেও নওয়াজ এ দিন মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন: গুলশানের হানাদার নিবরাসই কি পুরোহিত খুনের মূল চক্রী?
৮ জুলাই কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর অভিযানে হিজবুল মুজাহিদিনের কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের তরফ থেকে উস্কানিমূলক মন্তব্য করা শুরু হয়েছে। প্রথমে পাক বিদেশ মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে ভারতের সমালোচনায় সরব হয়। তার পর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজেও ভারতের কঠোর নিন্দা করেন। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক নওয়াজের এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছিল। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানকে মাথা না ঘামানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান ফের রাষ্ট্রপুঞ্জে বিষয়টি উত্থাপন করে। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা দমননীতি চালাচ্ছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত পাক দূত মালিহা লোদি মন্তব্য করেন। ভারতীয় দূত সৈয়দ আকবরউদ্দিন এর জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। ‘সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি’, বলেছিলেন আকবরউদ্দিন। তবে ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখেও পাকিস্তান থামতে নারাজ। পাক প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে প্রকারান্তরে কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার ডাক দিলেন।