(বাঁ দিকে) পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং আফগান প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সীমান্তে শান্তি ফেরাতে আফগান তালিবানকে আলোচনার টেবিলে বসার প্রস্তাব দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত ইসলামাবাদ-কাবুল সংঘাতে ইতি টানার জন্য এ বার উদ্যোগী হতে হবে আফগানিস্তানের শাসকদের। বৃহস্পতিবার শরিফ বলেন, ‘‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ‘বল’ এখন আফগান তালিবানের ‘কোর্টে’।’’ তাঁর শর্ত, ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি (পাক সরকার এবং সেনা যাদের ‘ফিতনা আল খোয়ারিজ়’ বলে চিহ্নিত করে) জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে কাবুলকে।
অন্যদিকে, ৪৮ ঘণ্টার সংঘর্ষবিরতির দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদকে নিশানা করেছে আফগানিস্তানের তালিবান প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দের সরকার। তাদের অভিযোগ, বুধবার রাজধানী কাবুলের জনবসতি এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাক ফৌজ। এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষে বুধবার সন্ধ্যায় আফগানিস্তানের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছিল পাক সরকার। তার মেয়াদ শেষের আগেই আফগান তালিবানের একাংশের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন টিটিপির বিরুদ্ধে সীমান্তবর্তী এলাকায় বুধবার গভীর রাতে অভিযান চালায় পাক সেনা। ফলে বৃহস্পতিবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সীমান্তে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সীমান্ত সংঘর্ষ ও আফগানিস্তানের মাটিতে পাক বায়ুসেনার হামলা প্রসঙ্গে শরিফ বলেন, ‘‘যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা (তালিবান সরকার) সমস্যাগুলি সমাধান করতে চায় এবং আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করে, তা হলে আমরা শান্তির জন্য প্রস্তুত।’’ এর পরেই কাবুলের উদ্দেশে তাঁর ‘শর্ত’—‘‘টিটিপি জঙ্গিদের নির্মূল করতে হবে এবং আফগান ভূখণ্ডকে কোনও ভাবেই সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।’’ আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে টিটিপি বিরোধী অভিযান চলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার গত এপ্রিলে যখন আফগানিস্তান সফরে গিয়ে তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের বার্তা দিয়েছিলেন। চিনের মধ্যস্থতায় মে ও অগস্ট মাসে আরও দুই দফা বৈঠক করেছিল পাকিস্তান-আফগানিস্তান। সেখানে আলোচনায় এসেছিল সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানের মাটি থেকে আফগান শরণার্থী বিতাড়ন এবং টিটিপি প্রসঙ্গ। কিন্তু গত ৯ অক্টোবর কাবুলে এবং ১০ অক্টোবর সীমান্তবর্তী পকতিকা প্রদেশে পাক যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের হামলার পরে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আফগান বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকির বিদেশ সফরের সময়ই এই ঘটনা ঘটে। এর পর গত মঙ্গল ও বুধবার সীমান্ত সংঘর্ষের মধ্যেই দক্ষিণ আফগানিস্তানের শহর কন্দহর ও আশাপাশের এলাকায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। কাবুলের পুলিশ প্রধান খালিদ জাদরান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বুধবার কাবুলের একটি আবাসন এবং বাজার নিশানা করে পাকিস্তান ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বেশ কয়েক জন হতাহত হয়েছেন।’’